আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, মঙ্গলবার, মে ২১, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Obaidul Quader

নিজ এলাকায় পরবাসী হলেন কাদের

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১ মে, ২০২৪, ০৩:১২ এএম

নিজ এলাকায় পরবাসী হলেন কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। অত্যন্ত ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ। টানা তিন বার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরেই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে করা হয় ওবায়দুল কাদেরকে। কিন্তু তিনি এখন তাঁর এলাকায় পরবাসী হয়ে গেলেন। এলাকায় তার কর্তৃত্ব নড়বড়ে হয়ে গেল। নিজ এলাকায় তিনি এখন আগন্তুক এবং অপাংক্তেয় হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

১৩৯ টি উপজেলায় প্রথম ধাপের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে নোয়াখালীর সুবর্ণচর ছিল অন্যতম। এই সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের জন্য ছিল অগ্নিপরীক্ষা। আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী তাঁর ছেলে শাবাব চৌধুরীকে সুবর্ণচর উপজেলার প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। আর এই উপজেলাতেই প্রার্থী হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অনেক ত্যাগী পরীক্ষিত নেতা অধ্যক্ষ সেলিম। অধ্যক্ষ সেলিম আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন বলে এলাকার সকলে জানেন। তিনি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বটে। কিন্তু তরুণ শাবাব চৌধুরী, একরামুল করিম চৌধুরী এবং তাঁর মার নির্বাচনী প্রচারণার বদৌলতে আওয়ামী লীগের এই ত্যাগী নেতাকে পরাজিত করেছেন। এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালীর রাজনীতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেন বলে এলাকাবাসী মনে করেন। 

নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রী কবিরহাটের উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ছেলে সুবর্ণচরের উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হলেন। ফলে নোয়াখালীতে একরামুল চৌধুরীর প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ল। 

নোয়াখালীর রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের এবং একরামুল করিম চৌধুরীর বিরোধ নতুন নয়। ওবায়দুল কাদের তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থে এই বিরোধের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন এবং এই বিরোধের কারণেই তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন বলেও ওই বইয়ে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনী বিরোধের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাজনীতি ছাড়তে চেয়েছিলেন, রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম (ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য) এবং সাবের হোসেন চৌধুরী (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী) দুই জনের মধ্যস্থতায় একরামুল করিম চৌধুরীর সাথে ওবায়দুল কাদেরের বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নেন এবং এরপর থেকে দুজন মোটামুটি একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখে আসছিলেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা বসুরহাট পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করে। এসময় কাদের মির্জা একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করতে থাকেন। এটি একরামুল করিম চৌধুরীকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে। এ নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছেও অভিযোগ করেছিলেন। এই বিরোধের জেরে নোয়াখালীর রাজনীতি আবার একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। 

শুধু নোয়াখালীর রাজনীতি না, কাদের মির্জার কারণে পুরো বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড প্রশ্নের মুখোমুখো হয়। সেই পরিস্থিতি ওবায়দুল কাদের দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর একরামুল করিম চৌধুরী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং তিনিও বিভিন্ন ভাবে ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে নানা রকম বক্তব্য রেখেছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরকম বাস্তবতায় একরামুল করিম চৌধুরী এবার উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে তাঁর ছেলেকে নির্বাচনে প্রার্থী করলেন এবং বিজয়ী করে আনলেন। এর ফলে জাতীয় রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়ল সেটা পরের কথা। নোয়াখালীর রাজনীতিতে কাদের পরিবারকে অনেকটাই কোণঠাসা করে ফেললেন একরামুল করিম চৌধুরী।

সূত্র : ইনসাইডার

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0