ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে একে একে ৩৮টি ড্রোন ধ্বংস করেছে রাশিয়া। এই ৩৮টি ড্রোনই ইউক্রেনের এবং দেশটি এসব ড্রোন দিয়ে ক্রিমিয়ায় আক্রমণ চালাতে এসেছিল।
তবে হামলা চালাতে আসা সব ড্রোনই ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া। যদিও এসব ঘটনায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহত হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। রোববার (৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার ভোরে ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে হামলা করতে ইউক্রেনের পাঠানো ৩৮টি ড্রোন রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এর আগে ক্রিমিয়ার ফিওডোসিয়া বন্দরে শক্তিশালী বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়ে ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে দেওয়া বিবৃতিতে রোববার ভোরের এই ঘটনায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহত হয়েছে কিনা তা জানায়নি।
অবশ্য ফিওডোসিয়ার কাছে রাস্তায় যান চলাচল উল্লেখযোগ্যভাবে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে ক্রিমিয়ার রাশিয়ান-নিযুক্ত কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন। এছাড়া ক্রিমিয়ান উপদ্বীপকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্তকারী সেতুতে যান চলাচল কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলেও ক্রিমিয়ার রুশ কর্মকর্তারা টেলিগ্রামে জানিয়েছেন।
যদিও এই সেতুতে স্থানীয় সময় রোববার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়।
এদিকে ফিওডোসিয়ার বাসিন্দাদের উদ্ধৃত করে রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় রাত ২ টার দিকে সমুদ্রবন্দর এবং একটি তেল ডিপো এলাকায় শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
বিস্ফোরণের খবর অবশ্য রয়টার্স স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। এছাড়া ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এরপর দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সংঘাত চলছে। এছাড়া রাশিয়ার কবল থেকে নিজেদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অঞ্চল দখলমুক্ত করার জন্য ইউক্রেন গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।
যদিও ইউক্রেনের সেই আক্রমণ খুব একটা সফল হয়নি। তবে ইউক্রেন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ক্রিমিয়ায় ড্রোন হামলা বেড়েছে। ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। অবশ্য বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মস্কোর এই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি।
খাদ্যের বিনিময়ে রাশিয়াকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র দিয়েছে উত্তর কোরিয়া
কিয়েভ অবশ্য বারবার বলেছে, তারা এই উপদ্বীপটি ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তবে দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে কৃষ্ণসাগরের এই উপদ্বীপটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠেছে।
সেখানে রাশিয়ান সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান হামলা সেভাস্তোপল বন্দরের জাহাজ এবং নৌ মেরামতের ইয়ার্ডগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করেছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতেও বিভিন্ন সময় আঘাত করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
অন্যদিকে কৃষ্ণ সাগরে মোতায়েন থাকা নিজের নৌবহর ব্যবহার করে ইউক্রেনের ওপর দূরপাল্লার হামলা চালাচ্ছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য ভূমধ্যসাগরের সাথে সংযোগকারী এই অঞ্চলটি মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে শক্তি প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার সৈন্যরা কৃষ্ণসাগরে মস্কোর সামরিক শক্তি হ্রাস করতে সফল হয়েছে। তার দাবি, কিয়েভের মিত্রদের কাছ থেকে বৃহত্তর সহায়তা পেলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার দেশের চূড়ান্ত বিজয় হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখলে নিয়েছিল রাশিয়া। অবশ্য বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মস্কোর এই দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি।
এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে, রুশ বাহিনী কৃষ্ণসাগরের এই উপদ্বীপটি দখল করার পর সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানেই দেখা গেছে, ক্রিমিয়ানরা সত্যিকার অর্থেই রাশিয়ার অংশ হতে চায়। যদিও সেই গণভোটকে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ স্বীকৃতি দেয়নি।
বিবিএন / কল্পনা