শুক্রবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৪
Logo
cricket
চট্টগ্রাম টেস্ট

বেহাল ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের হতাশার দিন

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশের সময়: ৩০ মার্চ, ২০২৪, ০২:০৭পিএম

বেহাল ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের হতাশার দিন
....সংগৃহীত ছবি

সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রাম টেস্টে অবশ্যই জিততে হবে বাংলাদেশ দলকে। কিন্তু সেই ম্যাচের প্রথম দিনেই দুর্দশা স্বাগতিকদের। বাজে ফিল্ডিং ও বোলিংয়ে হতাশায় মোড়ানো প্রথম দিন কেটেছে বাংলাদেশের। ক্যাচ ও ফিল্ডিং মিসের মহড়া এবং ভোঁতা বোলিংয়ের সুবাদে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। তিন হাফ সেঞ্চুরিয়ান নিশান মাদুষ্কা, দিমুথ করুণারতেœ ও কুসল মেন্ডিস ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন।

এতেই ৪ উইকেটে ৩১৪ রান করেছে লঙ্কানরা প্রথম দিন শেষে। নিশ্চিতভাবেই বিশাল এক সংগ্রহের পথে রয়েছে তারা। কারণ এখনো প্রথম টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানো কামিন্দু মেন্ডিস ব্যাট করতে নামেননি। অভিজ্ঞ দিনেশ চান্দিমাল ৩৪ ও অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১৫ রানে ব্যাট করছেন। আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন তাই বাংলাদেশী বোলারদের অগ্নিপরীক্ষাই দিতে হবে। পেস বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস অবশ্য বোলারদের পক্ষ নিয়ে দাবি করেছেন ফ্ল্যাট উইকেটে ভালো করা কঠিন।

সাগরিকার উইকেটে ব্যাটিং সহায়তা থাকে সাধারণত। এখানে হওয়া সর্বশেষ ৫ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৩৮০ রান হয়েছে গড়ে। তাই টস জিতেই ব্যাটিং নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন এনেছে। শরিফুল ইসলামকে বসিয়ে সেখানে সাকিব আল হাসানকে ফেরানো হয়েছে এবং নাহিদ রানার পরিবর্তে হাসান মাহমুদকে অভিষেক ক্যাপ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও টেস্ট দলে ডাক পেয়েছেন হাসান, কিন্তু ২২ ওয়ানডে ও ১৪ টি২০ খেলা এ তরুণের এবারই সুযোগ হয়েছে টেস্টে নামার।

শুরুর দিকে নতুন বলে কিছুটা সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন বাংলাদেশের দুই পেসার। বিশেষ করে হাসান দারুণ বোলিং করেছেন প্রথম থেকেই। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে হাসানের বলে নিশান মাদুষ্কার ক্যাচ স্লিপে মিস করেছে বাংলাদেশ। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটিং স্বর্গ হয়ে উঠেছে সাগরিকা। পরবর্তীতে সেই মাদুষ্কা ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়েছেন।

২৭ ওভারে বিনা উইকেটে ৮৮ রান তুলে লাঞ্চ বিরতিতে যায় লঙ্কানরা। অভিজ্ঞ দিমুথ করুণারতেœও দারুণ ব্যাটিং করেছেন। যদিও ২২তম ওভারে তিনি সহজ ক্যাচ দিলেও সাকিব তা হাতছাড়া করেছেন। এবারও দুর্ভাগা হাসান। এ দুটি ছাড়া খুব বেশি লঙ্কান ওপেনারদের বিচলিত করতে পারেননি বাংলাদেশী বোলাররা। 

লাঞ্চ বিরতির পর সেভাবে কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে শুরুতেই ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে যান মাদুষ্কা। ১০৫ বলে ৬ চারে ৫৭ রানে বিদায় নেন তিনি। কিন্তু কুসল ও করুণারতেœ ৯৬ রানের দারুণ উদ্বোধনী জুটির পর দলকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে গেছেন। দুজন মিলে ১১৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন।

সেঞ্চুরির পথে থাকা করুণারতেœ হাসানের পেসে প্লে’ড অন হয়ে যান। তিনি ১২৯ বলে ৮ চার, ১ ছয়ে ৮৬ রান করেন। এর কিছুক্ষণ পরই চা বিরতি হয়ে যায়। এই সেশনে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৩১ ওভারে ১২৬ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কা। ওভারপ্রতি ৪+ রানরেটই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের বোলিং কতখানি ভোঁতা ছিল। কুসল ততক্ষণে অর্ধশতক পেয়েছেন। ২ উইকেটে ২১৪ রান নিয়ে চা বিরতি থেকে ফিরে অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সঙ্গে দারুণ ব্যাটিং করেছেন কুসল।

দুজনের জুটি অবশ্য ৫৩ রানের হয়েছে স্লিপে শাহাদাত হোসেন দিপু ম্যাথুসের সহজ ক্যাচ নিতে না পারার কারণে। মেহেদি হাসান মিরাজের করা বলে চা বিরতির পরপরই সেই সুযোগ তৈরি হয়। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি ম্যাথুস, ৭১ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২৩ রানে বিদায় নেন হাসানের দ্বিতীয় শিকার হয়ে। কুসল অবশ্য সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনিই ম্যাথুসের আগে বিদায় নিয়েছেন সাকিবের ঘূর্ণিতে। কুসল ১৫০ বলে ১১ চার, ১ ছয়ে ৯৩ রানে বিদায় নিয়ে সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন।

যদিও শুরুতেই তিনি জীবন পেয়েছেন। তিনটি ক্যাচ না ছাড়লে হয়তো দিনটা বাংলাদেশের পক্ষেই থাকত। কিন্তু ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতায় সেটি হয়নি। দিনের শেষ সেশনে ১০০ রানে ২ উইকেট তুলে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ, সেটাই প্রথম দিনের সেরা সাফল্য বাংলাদেশ দলের। তবে রান হয়ে গেছে ৩১৪। আরও ৬ উইকেট হাতে আছে লঙ্কানদের। আগে টেস্টে টপঅর্ডাররা রান পাননি, যা করার ধনঞ্জয়া ও কামিন্দুই করেছেন। 

এবার শ্রীলঙ্কার টপঅর্ডাররা বাংলাদেশী ফিল্ডারদের বদান্যতায় রান পেয়েছেন। এখন অভিজ্ঞ চান্দিমাল ৩৪ ও ধনঞ্জয়া ১৫ রানে ব্যাট করছেন। তারা ইতোমধ্যে ২৫ রান যোগ করেছেন জুটিতে। এরপর কামিন্দু আসবেন ব্যাটিংয়ে। চ্যালেঞ্জ তাই দ্বিতীয় দিন সকালে আরও বেশি বাংলাদেশ দলের জন্য। যত দ্রুত সম্ভব সফরকারীদের আটকাতে না পারলে এই ম্যাচের শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যাবে স্বাগতিকরা।

অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম দিন বাংলাদেশের সেরা বোলার হাসান। তিনি ২ উইকেট নিয়েছেন ১৭ ওভারে ৫ মেডেনে ৬৪ রান দিয়ে। অন্যতম স্ট্রাইক বোলার খালেদ আহমেদ ১০ ওভারে ১ মেডেনে ৪১ রান দিয়েছেন। তাইজুল তার বাঁহাতি স্পিনে উইকেট নিতে না পারলেও ১৭ ওভারে ৪ মেডেনে মাত্র ৪৮ রান খরচা করেছেন। দীর্ঘ এক বছর পর টেস্টে ফিরে সাকিবও খুব একটা খারাপ করেননি। তিনি ১৮ ওভারে ২ মেডেনে ৬০ রান খরচায় একটি উইকেটও নিয়েছেন।

বোলারদের নিয়ে তাই বাংলাদেশের বোলিং কোচ অ্যাডামস বলেছেন, ‘তরুণরা অভিষেকে ভালো করছে। (নাহিদ) রানা আগের ম্যাচে দারুণ করেছে। আজকে হাসানও দারুণ বোলিং করেছে। সে বেশ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে বোলিং করেছে। তরুণ বোলার, দারুণ প্রতিভাবান। আমি দারুণ রোমাঞ্চিত তাদের নিয়ে। খালেদের নেতৃত্বে তাদের আরও অনেক উন্নতি করার সুযোগ আছে।’ তবে আজ দ্বিতীয় দিন বোলাররা ঘুরে দাঁড়াতে কি প্রয়োজন সে বিষয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন অ্যাডামস।

তিনি বলেছেন, ‘কীভাবে সাফল্য পেতে হবে, কীভাবে আরও ধারাবাহিক হওয়া যাবে এসব নিয়েই কথা হয়েছে। আমার মনে হয় এটাই টেস্ট ক্রিকেটের সিক্রেট। চাপের মধ্যে আপনি কতটা ধারাবাহিক থাকতে পারেন। ফ্ল্যাট উইকেটে কাজটা কঠিন হয়ে যায়। ফলে সেখানে ধারাবাহিক থাকাটা জরুরি।’ দেখা যাক বোলাররা তার কথা অনুসারে আজ কতখানি নিজেদের মেলে ধরতে পারেন।