কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের অপেক্ষায় দিন পার করছেন তার স্বজন ও নেতাকর্মীরা।
হত্যার ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার চার দিন পার হলেও মরদেহের সন্ধান মেলেনি। এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নতুন নতুন খবর বের হচ্ছে। এতে এমপি আনারের স্বজন ও নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কালীগঞ্জের ভূষণ রোডে এমপি আনারের বাড়ির সামনে গত কয়েকদিনের মতো আজও তার মরদেহ সন্ধানের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন, পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানীসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
প্রতি মুহূর্তে লাশের অপেক্ষায় এমপি আনারের পরিবার-স্বজন ও কর্মীরা
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শিবলী নোমান বলেন, এমপি আনার নিখোঁজের ১৩ দিন পার হলেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কলকাতায় খুন হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা বললেও আজ পর্যন্ত তার কোনো আলামত তারা দিতে পারেনি। নিখোঁজ হলে আমরা তার সন্ধান চাই, আর খুন হলে মরদেহ চাই।
এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, আপনারা লাশের সন্ধান চেয়ে আর কত নিউজ করবেন। আমার বাবার লাশ আজও পেলাম না। আর কত চোখের পানি ঝরলে আমার বাবার লাশের দেখা পাব। প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা এখনো বাবার লাশের সন্ধান মেলাতে পারেনি। এর মধ্যে আমার বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিগত দিনের কথা তুলে ধরে নিউজ করছে। এটা আমার জন্য আরও কষ্টকর। যে মানুষটি হাজারো মানুষের জানাজায় শরিক হয়েছে আজ তার ভাগ্যে জানাজাও জুটবে না?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার পারশ্রীরামপুর গ্রামের ইয়াকুল আলীর ১০ সন্তানের মধ্যে আনোয়ারুল আজীম আনার সবার ছোট। নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট স্কুল থেকে ১৯৮৪ সালে এসএসসি, কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এইচএসএসি পাস করেন আনার। এরপর কালীগঞ্জ উপজেলার হেলাই গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে শেফালী বেগমকে বিয়ে করেন। আনার-শেফালী দম্পতির পরিবারে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে অরিন ও ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। বড় মেয়ে সলিমুন নেছা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১০ সালে এসএসসি ও আলহাজ ফাইজুর রহমান ও আমজাদ আলী মহিলা কলেজ থেকে ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি বর্তমানে বিবাহিত।
ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ২০১৭ সালে সলিমুন নেছা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও আলহাজ ফাইজুর রহমান ও আমজাদ আলী মহিলা কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় (ভূইয়া একাডেমি) থেকে আইন বিভাগে পড়াশোনা করছেন। ছোট মেয়ে ডরিনকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন এমপি আনার। ছোট মেয়েকে রাজনীতিতে এনেছিলেন ২০২০ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। এরপর ২০২২ সালে কারীগরি বোর্ডের পরীক্ষা চলাকালে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন পরীক্ষার হলে ফেসবুকে লাইভ করলে কেন্দ্র থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। সেই থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কোনো কমিটি হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। ২২ মে তাকে হত্যা করা হয়েছে খবর শোনার পর পুরো কালীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। এখন পর্যন্ত তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেনি ভারতের পুলিশ।