লোহিত সাগরের পূর্বাঞ্চলে ১০০ দিনের জলদস্যুতা-বিরোধী অভিযানের পর শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনী ৩৫ সোমালি জলদস্যুকে মুম্বাই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক এই জলদস্যুদের দেশটিতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় এক দশক ধরে লোহিত সাগরে সোমালি জলদস্যুদের তৎপরতা তেমন দেখা না গেলেও সম্প্রতি তা বেড়েছে। এডেন উপসাগর ও উত্তর আরব সাগর অঞ্চলের শক্তিশালী দেশ ভারত। সোমালি উপকূলে ছিনতাইয়ের তিন মাস পর গত সপ্তাহে মাল্টার পতাকাবাহী কার্গো জাহাজ রুয়েনকে উদ্ধার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। ওই জাহাজের ৩৫ সোমালি জলদস্যু ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর সোকোত্রা থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে উত্তর আরব সাগরে মাল্টার ওই জাহাজটি ছিনতাই করেছিল সোমালি জলদস্যুরা। ২০১৭ সালের পর সোমালি জলদস্যুদের হাতে প্রথম বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ছিল এটি। রয়টার্স বলছে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের এই ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল ২০১১ সালে। ওই সময় সোমালি জলদস্যুদের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার তাদের কাছে গিয়েছিল মুক্তিপণ হিসেবে।
জলদস্যুদের ছিনতাইয়ের ঘটনা সর্বোচ্চে পৌঁছানোর সেই সময় ভারতের নৌবাহিনী বড় ধরনের হামলায় জড়িত জলদস্যুদের বিচার ও কারাগারে বন্দি করতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনী আটককৃত জলদস্যুদের সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
দেশটির নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছেন, এমভি রুয়েন ছিনতাইয়ে জড়িত জলদস্যুদের বিচারের মাধ্যমে কয়েক বছর পর প্রথমবারের মতো আবারও জলদস্যুদের বিচার করবে ভারত। দেশটির ‘অ্যান্টি-পাইরেসি ল-২০২২’ অনুযায়ী বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে এই জলদস্যুদের।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এডেন উপসাগর ও উত্তর আরব সাগরে কমপক্ষে এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ভারত। লোহিত সাগরের পূর্বে চলাচলকারী জাহাজগুলোকে সহায়তা করছে ভারতের মোতায়েন করা যুদ্ধজাহাজ। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথিদের ক্রমবর্ধমান হামলার মুখে বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ওই শিপিং রুটের নিরাপত্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের নৌবাহিনী কাজ করছে।
ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বলেছেন, এমভি রুয়েন ছিনতাইয়ের ঘটনার পর থেকে ভারতের নৌবাহিনী তাদের বিমান ও অন্যান্য জাহাজ থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে অঞ্চলটিকে ‘‘নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি কার্যক্রমের’’ আওতায় রেখেছে।
ভারতের নৌবাহিনীর চিফ অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার লোহিত সাগরে অভিযানের শততম দিনে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, সোমালি জলদস্যুরা এমভি রুয়েনকে ‘‘মাদার শিপ’’ হিসেবে ব্যবহার করে অন্যান্য জাহাজে আক্রমণ করতো। নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা গত ১৫ মার্চ এমভি রুয়েনকে উদ্ধার ও জলদস্যুদের আটক করেছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী জলদস্যুতা-বিরোধী অভিযানে ২১টি জাহাজ মোতায়েন রেখেছে। এই অভিযানে নৌবাহিনীর ৫ হাজার সদস্য অংশ নিয়েছেন। তারা সাগরে চলাচলরত ১ হাজারের বেশি জাহাজে তল্লাশি চালিয়েছেন। এক বিবৃতিতে দেশটির নৌবাহিনী বলেছে, তারা জলদস্যুদের হামলার অন্তত ১৮টি ঘটনায় সাড়া দিয়েছে। গত কয়েক দিনে নজিরবিহীনভাবে ভারতীয় নৌবাহিনী এক ডজনের বেশি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছে।
আর হরি কুমার বলেছেন, ‘‘এই অঞ্চলের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ভারত মহাসাগর অঞ্চলকে নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং স্থিতিশীল করার জন্য আমরাই প্রথম সাড়াদানকারী এবং আমরা পছন্দের নিরাপত্তা অংশীদার হওয়ার জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সক্ষম।
ভারতের নৌবাহিনী বলেছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৫৭টি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলাসহ ৯০টিরও বেশি সামুদ্রিক ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া জলদস্যুতা, ছিনতাই বা সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডসহ ৩৯টি ঘটনা ঘটেছে।