আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Dates are the luxury product of Iftar

ইফতারের বিলাসী পণ্য এবার খেজুর

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩ মার্চ, ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম

ইফতারের বিলাসী পণ্য এবার খেজুর
ইফতারের বিলাসী পণ্য এবার খেজুর

রমজানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ইফতারে চাহিদার শীর্ষে থাকে খেজুর। তবে এই রমজানে খেজুরের দামের মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ইফতারে যেন খেজুর রাখাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চড়া নিত্যপণ্যের বাজারে ইফতারে খেজুর হয়ে উঠেছে রীতিমতো বিলাসী পণ্য।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, সৌদি, মিশর, দুবাই, তিউনিসিয়া, ইরান থেকে আসা বিভিন্ন জাতের খেজুরে ভরা বাজার। আমদানি করা নানান জাতের খেজুরের মধ্যে রয়েছে মরিয়ম, মাবরুম, কালমি, দাবাস, জাহিদি, সায়ের, আজওয়া, মেডজুল, সুক্কারি ও মাশরুখ। এ বছর ৫ হাজার টাকা প্যাকেট হিসেবে প্রতি কেজি মরিয়ম খেজুর পাইকারি বাজারে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রেতারা এই খেজুর আবার ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। 

আজওয়া খেজুর পাইকারিতে কেজি প্রতি ১২০০ টাকায় ও খুচরা বাজারে দুইশো টাকা বেশি দামে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মেডজুল খেজুর এক কেজি ১৩৫০ টাকা পাইকারি ও খুচরা বাজারে ১৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ দাম বেড়েছে উন্নতজাতের এই তিন প্রকার খেজুরের। গেল রমজানে পাইকারিতে মরিয়ম ৭০০, আজওয়া ৯০০ ও মেডজুল ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। মানভেদে এবছর মাবরুম খেজুর পাইকারিতে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে গিয়ে কেজি প্রতি ১০০ থেকে দেড়শো টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এই খেজুরের। গত বছর এই খেজুরের পাইকারি দাম ছিল ৪৫০ থেকে ৬৪০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, এবছর দাম বাড়ায় মাবরুম, মরিয়ম, আজওয়া ও মেবডুলের যে চাহিদা ছিল সেটা কিছুটা কমেছে। সাধারণ মানুষ বাজারে তুলনামূলক কম দামি খেজুর খুঁজছেন। এছাড়াও সাধারণ মানুষের খেজুর হিসেবে পরিচিতি ইরাকের জাহিদি খেজুর খুচরা বাজারেই ২০০ থেকে আড়াইশো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রমজানে এই খেজুর ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি।

খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি খেজুরের দাম বেড়েছে ২শ থেকে ৬শ টাকা পর্যন্ত। মধ্যমানের দাবাস, মাশরুখ, সুক্কারি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানিনির্ভর হওয়ায় আমদানি ব্যয়, ভ্যাট, করসহ নানা খরচের কারণে খেজুরের দাম এবার গতবারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, কাস্টম ডিউটি ট্যাক্স ও রেগুলেটরি ডিউটি ট্যাক্স দাম বাড়ার প্রধান কারণ।

আমদানিকারকরা বলেন, খেজুরের এত চড়া মূল্য কখনো হয়নি। ভ্যাট-ট্যাক্সের কারণে বাজারে অস্থিরতা বেশি। গত বছর প্রতি কনটেইনার মাল আনতে ট্যাক্স ছিল তিন লাখ, এবছর হিমায়িত কনটেইনার ট্যাক্স ধরেছে ৫৪ লাখ টাকা। কেউ এর চেয়ে কিছু কমবেশি দিয়েও নিয়েছে। প্রতি কনটেইনারে মাল থাকে ২৫ টন। ট্যাক্স বেশি হওয়ার কারণে অনেকে মাল আমদানি করতে পারেনি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারদের থেকে মাল কিনে চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, বাজারের সর্বোচ্চ দামের মাবরুম, মরিয়ম, মেডজুল, কালমি, আজওয়া এবার কম চলছে। মালের মজুতও রয়েছে। কিন্তু দামি খেজুরের ক্রেতা কম।

একই তথ্য দেন আরেক আমদানিকারক। তিনি বলেন, গত বছর থেকে হু হু করে খেজুরের দাম বেড়েছে। এবছর এক লাফে দাম হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। নতুন করে যোগ হয়েছে কাস্টম ডিউটি ২৫ শতাংশ। সঙ্গে রয়েছে রেগুলেটরি ডিউটি ও ভ্যাট ১৫ শতাংশ। এসব খাতে আগে এত রাজস্ব দিতে হতো না ব্যবসায়ীদের। মূলত এর প্রভাবই বেশি পড়েছে খেজুর আমদানিতে। এবার সরকারের নির্দেশে ভ্যাট ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করায়ও ব্যাংকে এলসি ও ডলারের সংকটের ফলে দাম কমছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি খোলার জটিলতাতো করোনার পর থেকেই রয়েছে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। কাস্টম ডিউটি ট্যাক্স, রেগুলেটরি ডিউটি ট্যাক্স যুক্ত হওয়ায় দাম বেড়েছে এটা ঠিক। কিন্তু আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট সিন্ডিকেটেরও কিছুটা প্রভাব রয়েছে। অনেক আমদানিকারক শুল্ক ফাঁকি দিতে সৌদি, মিশরের উচ্চমূল্যের খেজুর কম দাম দেখিয়ে আমদানি করেছেন। কিন্তু বাজারে শুল্কের অভিযোগ দিয়ে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বড় বড় ৫ থেকে ৭টি প্রতিষ্ঠান এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।

ফুটপাতের এক খেজুর বিক্রেতা বলেন, গতবছর খেজুরের দামের তুলনায় এ বছর ডাবল দাম। মূল্য বৃদ্ধির কারণে লোকজন গতবছর ৪-৫ কেজি করে কিনলেও এবছর খেজুর কিনছে হাফ কেজি আড়াইশো গ্রাম করে। প্রতিবারের তুলনায় এবার বিক্রি কমেছে।

খুচরা খেজুর বিক্রেতা বলেন, খেজুরের দাম বৃদ্ধির কারণে কাস্টমার কমে গেছে। দাবাস খেজুর ও খালাস খেজুর এবার তুলনামূলকভাবে একটু বেশি বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের বাজারে আসা সিএনজি চালক জানান, এবার আমরা খেজুর খেতে পারবো না। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে খেজুরের দাম।

ক্রেতা জানান, এবার খেজুর ছাড়াই ইফতার করতে হবে। সরকারের কাছে অনুরোধ খেজুরের দামের ব্যাপারটা দেখতে। এভাবে দাম বাড়লে খেজুর ছাড়াই ইফতার করতে হবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। দামে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রেখে বেচা-বিক্রির সুযোগ নেই।

বিবিএন/১৩ মার্চ/অর্চনা


google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0