নানা প্রতিকূলতার মধ্যে যাচ্ছে দেশের শিল্প খাত। অর্ডার কমে যাওয়াসহ নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পে। এ রকম বৈরী পরিবেশেও আসছে নতুন বিনিয়োগ। ২০২৩ সালে দেশে ২৬৪টি নতুন পোশাক কারখানা নির্মাণ হয়েছে। এগুলোর বেশ কিছু উত্পাদনে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কোনো কোনোটি ইতিমধ্যে উত্পাদন শুরু করেছে।
নতুন বিনিয়োগের এসব কারখানার একটি বড় অংশই ম্যানমেইড ফাইবারের পোশাক উত্পাদন করছে। বিশ্ববাজারে এ ধরনের উচ্চমূল্যের পোশাকের চাহিদাই এখন বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য বলছে, গত বছর নতুন ১৬৪ কারখানার মধ্যে ১৩০টি বিজিএমইএর স্থায়ী সদস্য। বাকি ১৩৪টি অস্থায়ী সদস্য। অবশ্য ২০২২ সালে নতুন কারখানার সংখ্যা আরো বেশি ছিল। ঐ বছর স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে মোট ৩৩০ কারখানা নতুন করে বিনিয়োগে আসে। অর্থাত্ গত দুই বছরে ৫৯৪টি কারখানা বিনিয়োগে এসেছে। নতুন বিনিয়োগ সম্পর্কিত আগের বছরগুলোর তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে নতুন কারখানার সংখ্যা ছিল ১৪৯টি। ২০২০ সালে ছিল ১২৩টি। ২০১৯ এবং ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৪৯ এবং ১৫৩টি।
গত কয়েক বছর ধরে রপ্তানিতে গতি কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৬৮ ডলার বেশি। ঐ বছর ৪ হাজার ৫৭১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। অর্থাত্ এক বছরে রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সাধারণত পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপরে থাকে।
উদ্যোক্তাদের বলছেন, অভ্যন্তরীণভাবে পোশাক খাতের সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে গ্যাস-বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং সহজলভ্য না হওয়া। গ্যাস-সংকটে কারখানা পূর্ণাঙ্গ সচল রাখা যাচ্ছে না। এতে উত্পাদন ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া ডলার সংকটে অনেক কারখানা প্রয়োজন মতো আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। গত ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া নতুন মজুরি কাঠামোও বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। অন্যদিকে করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও আমদানি নিরুত্সাহিত করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা পরিস্থিতি দিন দিন আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে পোশাক খাতে নতুন বিনিয়োগ বিষয়ে বিজিএমইএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজার বর্তমানে কিছুটা খারাপ যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ সব দেশের রপ্তানি কমছে। তবে পরিস্থিতি সব সময় এরকম থাকবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভসহ অনেক দেশই নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এ কারণে এখন সংকট যাচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে পোশাকের বিশ্ববাজার আবার চাঙ্গা হবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা।