আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Investigation of the incident of molestation

শ্লীলতাহানির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন হিমঘরে

Bijoy Bangla

শাহানুর রহমান রানা (রাজশাহী)

প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০৫:০৬ পিএম

শ্লীলতাহানির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন হিমঘরে
___প্রতীকী ছবি

মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) ও উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ ও রেকর্ডস-দায়িত্বপ্রাপ্ত) জাহিদুর রহিমের বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতা এক নারীর শ্লীলতাহানি, অনৈতিক প্রস্তাব ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে গেল বছরের ৫ ডিসেম্বর। ঐদিনই ভুক্তভোগী নারী বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারি সুমির (ছন্দনাম) গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলায়। ভুক্তভোগী নারীর লিখিত অভিযোগ ছাড়াও সংশোধনী কমিটির বোর্ড মিটিংয়ে অসদাচরণের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠনসহ উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জাহিদুর রহিমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করেন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো: অলীউল আলম। শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির অন্যদুজন সদস্য হলেন, রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শ্রী কালাচাঁদ শীল ও একই কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর জাহাঙ্গীর আলম।

মন্তব্য করতে গিয়ে শিক্ষা বোর্ডে কর্মরতরা বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে প্রায় দুই মাস আগে। কিন্তু, সেটির প্রতিফলন এখনো পড়েনি দাপ্তরিকভাবে। এই স্থিতিবস্থা আর কচ্ছপ গতির কারণে তদন্ত প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠতা আর ঘটে যাওয়া প্রকৃত ঘটনার সতত্যা যথোপযুক্তভাবে স্থান পেয়েছে কিনা ঐ তদন্ত প্রতিবেদনে সেটি নিয়ে নানাজনের নানাপ্রশ্ন বোর্ডজুড়ে। চুড়ান্তভাবে জমা পড়া তদন্ত প্রতিবেদনের পরবর্তী ধাপ কেনো বা কি কারণে প্রায় দেড়মাস হিমঘরে পরে আছে সেটি নিয়ে চলছে নানাগুঞ্জন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে, অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা বরাবর বোর্ড কর্তৃক প্রেরিক কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে, সেবা গ্রহণকারীর নিকট থেকে টাকা উৎকোচ, ফেসবুক ও হোয়াটস অ্যাপে আজে বাজে কথা বলা, বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াসহ নানা হয়রানি রকম কেন করেছেন এবং উক্তকারণে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত কমিটির সভায় অশোভন আচরণ ও বাজে কথা বার্তা বলে সভাস্থল ত্যাগ করার কারণে তিন কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছিল জাহিদুর রহিমকে। 

জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো: অলীউল আলম বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। শিক্ষা বোর্ডের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিষয়টি চলমান রয়েছে। শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থবোধ করায় তিনি এবিষয়ে শিক্ষা বোর্ড সচিবের সাথে কথা বলতে বলেন। সে মোতাবেক, সচিব হুমায়ন কবিরের দপ্তরে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ারম্যান স্যারের কাছে জমা আছে। আমি এবিষয়ে তেমন কিছু জানিনা। এটি দাপ্তরিক বিষয়। তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ সদস্যের তথ্য সংস্থাপন শাখার কর্মকর্তার কাছে পাবেন। আপনি ওখানে যান, আমি বলে দিচ্ছি বলেই তিনি তার মন্তব্য ও তথ্য প্রদান শেষ করলেন। অপূর্ণয় রয়ে গেলো প্রতিবেদকের তথ্য জানার অধিকারের বিষয়টি। 

কতটা স্বচ্ছতা আর বাধাহীনপন্থায় তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা হয়েছে সেটি নিয়েও কর্মরতদের মাঝে উঁকি দিচ্ছে নানা প্রশ্ন। কারণ হিসেবে কর্মরতরা বলছেন, ‘যিনি অভিযুক্ত তিনি তো তদন্তকালীন সময়েও অফিস করেছেন দেদাড়ছে। সৃষ্ট হওয়া স্পর্শকাতর সেই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক রাখতে সংশোধন কমিটি থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে মাত্র । কিন্তু তাতে কি; গুরুত্বপূর্ণ অন্য একটি পদে দাপটের সাথেই তিনি পার করেছেন তদন্তকালীন স্পর্শকাতর সময়গুলো। যার কারণে, তদন্ত চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা তদন্ত কর্মযজ্ঞে কোন প্রকার প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি সেটা নিশ্চিত করে বলাটা বেশ কঠিণ’। 

প্রায় সমস্ত শিক্ষা বোর্ডজুড়ে ‘সিসি ক্যামেরা’ স্থাপন করা থাকলেও ঘটনাস্থলের আশেপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহপূর্বক উভয়পক্ষের গতিবিধি, কক্ষে অবস্থান করার সময়ক্ষণ সহ ঘটনা ঘটার পরবর্তী সময়ের আচরণগত বহিঃপ্রকাশ ও মানসিকবস্থার হালচাল সংক্রান্ত সমজাতীয় বিষয়গুলো তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হলে সেদিকে কতটা নজড় দিয়েছে তদন্ত কমিটি সেটি নিয়েও সন্দেহের তীড় বেগমান কর্মরতদের মাঝে।

অভিযোগের সুত্র ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অভিযুক্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহিমের নিকট ভুক্তভোগী ওই নারী একটি সংশোধনের আবেদন করেন। আবেদন পেয়ে ওই কর্মকর্তা কাজটি করে দিবে বলে ‘হোয়াটস্ অ্যাপ-মেসেঞ্জার’ জাতীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুক্তভোগী ওই নারীর সাথে রাত কাটানোর (উন্মুক্ত চ্যাটিং) কুপ্রস্তাবসহ অশালীন কথাবার্তা বলেন। এরপর ওই নারী আবেদনের সংশোধন কপি নিতে আসলে অফিস কক্ষে একা পেয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা রহিম নানাপন্থায় তাঁর (নারীর) শরীরের খুব নিকটে এসে শরীর স্পর্শ করতে থাকে। একসময় সেই স্পর্শের পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে। এছাড়াও সংশোধনের নামে তিনি ওই নারীর কাছে ঘুষ দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কুপ্রস্তাবসহ নানাবিধ হয়রানি করতে থাকেন অভিযুক্ত ঐ কর্মকর্তা। অবশেষে কয়েকদিন পর ঘটান শ্লীলতাহানির মতো চরম ন্যাক্কারজনক ঘটনা। তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে এবং মুখবন্ধ রাখার জন্য ওই নারীকে অভিযুক্ত কর্মকর্তা জাহিদুর রহিম হুমকি ধামকিও দেয়। অবশেষে বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

এদিকে, রাজশাহী শহীদ মামুন মাহমুদ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মাওলার প্রায় বিশ মিনিটের একটি গোপনীয় রেকর্ডিং (তিনজনের কথপোকথন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে অভিযুক্ত শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তার শ্লীলতাহানির ঘটনাসহ আরো বেশকিছু বিষয়ের উপর সন্দেহের অস্থিরতা বেড়ে যায় কর্মরত ও সেবাগ্রহীতাদের মাঝে। ভাইরাল হওয়া ঐ রেকর্ডিংয়ে অধ্যক্ষ গোলাম মাওলা শ্লীলতাহানির বিষয় ছাড়াও অভিযুক্ত শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তার নৈতিকতা ও সরকারি কাজের দায়বদ্ধতা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এতে কের অভিযুক্ত কর্মকর্তার দিকে সন্দেহের তীড় আরো তীব্র হয়। কর্মরতরা আরো জানান, এর আগেও অভিযুক্ত কর্মকর্তা রহিমের বিরুদ্ধে সমজাতীয় আরো একটি অভিযোগ ওঠে পাবনার আরো একজন মহিলা সেবা গ্রহীতার পক্ষ থেকে। বিষয়টি তখন থামাচাপা দেয়া হয় শিক্ষা বোর্ডের সম্মানহানী ঘটবে বলে।  

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0