আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Kidnapping incident

টেকনাফে দিনের পর দিন অপহরণের ঘটনা বেড়েই চলছে

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ১১ মার্চ, ২০২৪, ০৬:০২ পিএম

টেকনাফে দিনের পর দিন অপহরণের ঘটনা বেড়েই চলছে
কক্সবাজারের টেকনাফে দিনের পর দিন বেড়েই চলছে অপহরণ বাণিজ্য।....সংগৃহীত ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফে দিনের পর দিন বেড়েই চলছে অপহরণ বাণিজ্য। স্কুল, কলেজ, কাঠুরিয়া, জেলে, কৃষকসহ গত তিন বছরে দেড় শতাধিক মানুষ অপহরণে কবলে পড়েন। অপহরণের পর মুক্তিপণ দিতে না পেরে নিহত হয়েছেন ৫ জন। এসব ঘটনায় এ অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বলে জানা গেছে।

অপহরণের কবল থেকে ফেরত আসা বাহারছড়ার বাসিন্দা ছৈয়দ আলম (৪০) বলেন, শুক্রবার (৮ মার্চ) জাহাজপুরার আলী আহমদসহ আমরা দু’জন পানের বরজে কাজ করছিলাম। হঠাৎ ৮-১০ জনের অস্ত্রধারী একটি দল আমাদের জিম্মি করে পাহাড়ের ভেতরে নিয়ে বেঁধে রাখে। পরে তাদের নির্যাতনে নিরুপায় হয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহরণকারীদের কবল থেকে একদিন পর বাড়িতে ফেরত আসি।

হ্নীলার বাসিন্দা নুর জাহান বলেন, আমার ছেলে সোয়াত বিন আব্দুল্লাহ (৬) শনিবার (৯ মার্চ) মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওইদিন দুপুরে অপহরণকারীরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। এখনো ছেলেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা মির কাসেম বলেন, রোববার (১০ মার্চ) সকালে আমার দুই ছেলে নুর কবির ও জসিমসহ ৭ জন উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে পাহাড়ি কাজ করতে যায়। সেখানে আরও ৫ জন কাঠ সংগ্রহ ও গরু চড়াতে গেলে ১০-১৫ জনের একটি সশস্ত্র দল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদেরকে পাহাড়ের নিয়ে যায়। পরে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলে হাত-পায়ে ধরে নগদের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পৌঁছানোর পর রাতে তাদেরকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।

বাহারছড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরিদ আলম বলেন, গত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে মারিশবনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল আলিম মায়ের সঙ্গে পানের বরজে কাজ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা ৪-৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে তাকে অপহরণ করে। এ ঘটনার ৫ দিন পরে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাকে ফেরত এনেছিল তার পরিবার।

তিনি বলেন, এর আগেও বাহারছড়ার সিএনজির ড্রাইভার মাহমুদুল করিম ও হ্নীলার ইজিবাইক চালক মো. হোসন মুক্তিপণের টাকা দিতে না পেরে নিহত হয়েছিল। পরে শামলাপুর ঢালা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর কক্সবাজারের মো. ইউসুফ, জমির হোসেন ও মো. ইমরান নামে তিন বন্ধু বাহারছড়া নোয়াখালী পাড়ায় বেড়াতে আসলে তারাও অপহরণের শিকার হয়। পরে দাবীকৃত ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে না পারায় তাদেরকে হত্যা করে অপহরণকারীরা। এ পর্যন্ত বাহারছড়া থেকে ৭০-৮০ জনের অধিক লোক অপহরণের কবলে পড়ে প্রত্যেকে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে ফেরত আসতে হয়েছে।

দিনের পর দিন যেভাবে অপহরণের ঘটনা বেড়েই চলছে, সাধারণ মানুষ এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেনা। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি -দমকি দেওয়া হয় বলে জানান এ ইউপি সদস্য।

হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, গত কয়েক বছরে এ অঞ্চলের বিভিন্ন পেশার দেড় শতাধিক মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছে। তারা প্রত্যেকে মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়া পেয়েছেন। দিনের পর দিন যেভাবে অপহরণের ঘটনার বাড়ছে এতে মানুষের মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীরা পাহাড়ে যেতে পারে না। একদিকে অপহরণ আতঙ্কে ভুগছেন অপরদিকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, কোনো অপরাধ হলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে অপহৃত অনেককে উদ্ধারসহ  অপহরণকারী চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় গোয়েন্দারা অপহরণকারী চক্রকে গ্রেপ্তারে কাজ করছে। 

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0