আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Fiscal deficit and bank debt

রাজস্ব ঘাটতি ও ব্যাংক ঋণ

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৫ মে, ২০২৪, ০৯:৪১ পিএম

রাজস্ব ঘাটতি ও ব্যাংক ঋণ
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সরকার বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।....সংগৃহীত ছবি

চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সরকার বড় অংকের রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। বিগত ছয় মাসের রাজস্ব আদায়ের চলমান ধারা পর্যবেক্ষণে এ অর্থবছর শেষে ৮২ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হতে পারে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। আর অর্থনীতির নানাবিদ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের মেয়াদের প্রথম বছরকেই সেরা সময় মনে করছে সংস্থাটি।

সংস্থাটি বলছে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে অর্থবছরের বাকি সময়ে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি দরকার হবে ৫৪ শতাংশ যা প্রায় অসম্ভব। কারণ গত ৬ মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ যদিও এ অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৬ শতাংশ। এ বছর রাজস্ব আহরণ নিয়ে খুব চাপের মধ্যে আছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

বিগত তিন অর্থবছরের তুলনায় মোট বাজেটের অনুপাতে আদায় হার কম। এনবিআর কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রথম ৬ মাসে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা আদায় হয়। এটি মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ শতাংশ।

এনবিআরবহির্ভূত কর বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ মাসে ৩ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা মাত্র আদায় করতে পেরেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের পর্যালোচনায় বলা হয়, এমনিতে ডলার সংকটে এলসি খোলার জটিলতা পণ্য আমদানি খাতকে সংকুচিত করেছে।

অপরদিকে বিগত কয়েক মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলছে রপ্তানি কার্যক্রমের ওপর। অবরোধসহ নানা কর্মসূচির কারণে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায় অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। ফলে এসব খাত থেকে কমেছে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রাজস্ব আদায়। যে কারণে রাজস্ব আদায় ভালো থাকলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে তা কমে আসে। আগামী বাজেট এমন একটা সময় প্রণয়ন হতে যাচ্ছে যখন সামষ্টিক অর্থনীতি নেতিবাচক ধারায় রয়েছে।

দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকের তারল্য সংকট, বাজেট বাস্তবায়নে নি¤œ ও শ্লথ গতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নি¤œগামী এবং রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স নিচের দিকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিশেষ করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও নি¤œ মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য সূচক যেখানে থাকার কথা সেখানে নেই। বরং চরমভাবে চাপের মুখে পড়েছে। এর কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুটোই। সিপিডির মতে, রাজস্ব আহরণে ধীরগতি, মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকটসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতি চাপে রয়েছে। এর ফলে আমরা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলেছে।

সেই স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করাটাই হবে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্য। এজন্য সরকারের মেয়াদের প্রথম বছরেই সংস্কারমূলক নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী বছর প্রবৃদ্ধিতে নজর না দিয়ে বরং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় জোর দেওয়ার কথা বলেছে সংস্থাটি।

অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ব্যাংক ঋণে ঝুঁকছে সরকার। চলতি অর্থবছরের শুরু“থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ ছিল ১২০ কোটি টাকা বেশি। তবে আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এখন ব্যাংক ঋণ নিতে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ বেশি ছিল ৩ হাজার ১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে এসে ব্যাংক ঋণের দিকে কিছুটা ঝুঁকছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ঘাটতি ৪০ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। আবার সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ না বেড়ে জানুয়ারি পর্যন্ত উল্টো ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা কমেছে।

এর মধ্যে আবার ডলারের উচ্চদরের কারণে বিদেশী ঋণ পরিশোধে সরকারের খরচ অনেক বেড়েছে। আবার আশানুরূপ বিদেশী ঋণও আসছে না। ফলে অতি প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে সরকারকে কিছু ব্যাংক ঋণ নিতে হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত নেওয়া ঋণ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ, নতুন গাড়ি বা স্থায়ী সম্পদ কেনার ওপর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। টাকার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের ৪২ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে ২৫ হাজার কোটি টাকার বন্ড দিচ্ছে।

এই বন্ড না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে দিলে তাতে মূল্যস্ফীতি অনেক বাড়ত। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করে বাজার থেকে তুলে নিয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। ফলে সরকারের এ ঋণ মূল্যস্ফীতিতে অনেক বেশি প্রভাব ফেলবে তেমন না। তবে ঋণ নেওয়া বাড়তে থাকলে বেসরকারি খাত বাধাগ্রস্ত হবে। আবার মূল্যস্ফীতিতেও প্রভাব বাড়বে। এখন শঙ্কা হলো রাজস্ব ঘাটতি ও অধিক হারে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা দুটিই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

এতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলে যার সঙ্গে প্রবৃদ্ধি জড়িত যা উন্নয়নের নিয়ামক। তাই অর্থনীতির স্বাস্থ্য মজবুত করার জন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ থাকতে হবে। ট্যারিফ রেট, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ৬ শতাংশের কাছাকাছি, বিপরীতে বাংলাদেশে প্রায় ৩ গুণের বেশি, বাজারে প্রতিযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে প্রত্যক্ষ করের সীমা ঠিক রেখে করের আওতা বাড়াতে হবে। তা হলেই সংকট অনেকাংশে নিরসন হবে।



google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0