আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Heavy damage to mangoes due to fire

দাবদাহে বাগানগুলোতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:২৬ এএম

দাবদাহে বাগানগুলোতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে
দাবদাহে বাগানগুলোতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিজয় বাংলা নিউজ

তীব্র দাবদাহ ও টানা খরায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঈশ্বরদীর আম ও লিচুবাগান। প্রচণ্ড উত্তাপে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমের গুটি ঝরে পড়েছে। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আমচাষি, বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। একইভাবে তীব্র খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঈশ্বরদীর লিচুসহ ১০ হাজার ১শ’ ২৫ হেক্টর জমির ফসল।

রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মামুন-অর-রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব সংবাদদাতা জাহিদা হাসান মাহমুদ মিম্পা এবং ঈশ্বরদীর স্টাফ রিপোর্টার তৌহিদ আক্তার পান্না এ খবর পাঠিয়েছেন।

রাজশাহী ॥ তীব্র খরায় পুড়ছে রাজশাহী অঞ্চল। দিনের তাপমাত্রা প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। টানা খরার কারণে বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। সেচের ব্যবস্থা না থাকায় ইতোমধ্যে অনেক বাগানেরই অন্তত ২০ শতাংশ আমের গুটি ঝরে গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, খরা দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকলে গুটিও ঝরতে থাকবে।

বৈশাখের সূর্যে যেন  আগুন ঝরছে। পুড়ছে উত্তারাঞ্চল। ঠাঠা রোদে তপ্ত কড়াইয়ের মতো তেঁতে উঠেছে পথ-ঘাট। দুপুর গড়াতেই তাপমাত্রার পারদ গিয়ে ঠেকেছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজশাহীজুড়ে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। প্রখর রোদ-গরমে সুস্থ থাকতে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ১ এপ্রিলের পর রাজশাহীতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল।

এদিকে, তীব্র খরার কবলে পড়ে হু হু করে নেমে যাচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। অবর্ণনীয় এক নিদারুণ কষ্টে একেকটি দিন-রাত পার করছেন এ অঞ্চলে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষ। আমচাষি ও  বাগান ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর এসব উপজেলার আমের বাগানগুলোতে মুকুল এসেছিল চাহিদার তুলনায় অনেক কম। চলতি মাসে টানা দাবদাহে বোঁটা শুকিয়ে ঝরে পড়ে যাচ্ছে গুটি।

কারণ বেশির ভাগ বাগানেই সেচের ব্যবস্থা নেই। ফলে গাছের গোড়ায় মাটিতে রস শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই পাতায় পানি স্প্রে করছেন। কিন্তু এতে ঝরে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। এমন বৈরী আবহাওয়া আমের গুটি ঝরে পড়ার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের আম চাষিরা।

নগরীর খড়খড়ি বাইপাশের আমচাষি শরিফুল ইসলাম কাদু বলেন, তীব্র খরায় আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে আর হলুদ আকার ধারণ করে ঝরে পড়ছে। মৌসুমের শুরুর দিকে বেশ ভালো মুকুল আসলেও ঘন কুয়াশা ও হাল্কা বৃষ্টিতে প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় মুকুল। এরপর যে খরা চলছে এতে করে গাছে আম ধরে রাখাই কষ্টকর।

কাশিয়াডাঙ্গার এনতাজ আলী বলেন, আমের জন্য এ সময় বৃষ্টি খুবই প্রয়োজন। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার আমের আকার বেশ ছোট হবে। সে সঙ্গে আমের উৎপাদনও কমে আসবে। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আমের দাম বেশ চড়া থাকবে। কেননা গাছে তো আম নেই। পবার নাজমুল ইসলাম জানান, আমবাগানে সেচের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই প্রতিদিনই তিনি পানি স্প্রে করে আমের গুটি রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও ফল হচ্ছে না।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর আমের অন ইয়ার থাকলেও এবার অফ ইয়ার, ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমের ফলন কমবে, তবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। বিশেষ করে খরার কারণে গাছের গোড়ায় মাটির রস শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। গুটি রক্ষায় সেচ প্রয়োজন। সেচের ব্যবস্থা না থাকলে অন্তত সকালে বা সন্ধ্যায় গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন। গত বছর এ অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়েছিল। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোছা. উম্মে সালমা বলেন, সব উপজেলায় খরা মোকাবিলায় আমের গুটি টিকিয়ে রাখতে চাষিদের  সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ প্রচ- দাবদাহ ও খরায় ঝরে পড়ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগানের আমের গুটি। আমচাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিজুড়ে আমবাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি।

প্রচুর দাবদাহ ও খরায় আমের বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। সেচ ও নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেও টেকানো যাচ্ছে না আম। আর এতেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এবার আমের উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন তারা। চাষিদের দাবি, ইতোমধ্যে অনেক বাগানে প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমের গুটি ঝরে পড়েছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পলশা গ্রামের আমচাষি মামুদ রানা বলেন, প্রচুর তাপ বা খরায় আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। চলতি মৌসুমে আমের মুকুলও কম এসেছে। তার পরও শুরুর দিকে ঘন কুয়াশা ও চৈত্রের বৃষ্টিতে প্রথম দফায় মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন আবার প্রচুর তাপ ও খরায় আম পড়ে নষ্ট হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ায় আমের গুটি ঝরে পড়ায় আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

একই গ্রামের আমচাষি সিরাজ জানান, এত খরায় পানি দিয়েও গাছের আমের গুটি টেকানো যাচ্ছে না। এখন যদি বৃষ্টি হতো তাহলে আমের গুটি কিছুটা টেকানো যেত।

ম্যাঙ্গো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫টি উপজেলার মধ্যে সিংহভাগ আম হয় শিবগঞ্জে। কিন্তু এবার শিবগঞ্জে আমের অবস্থা খুবই খারাপ।

চাষিদের আম বিক্রি করে কীটনাশকের খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ থেকে ৪০/৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলমান রয়েছে। ফলে প্রচ- তাপ ও খরায় আমের বোঁটা শুকিয়ে আম ঝরে যাচ্ছে। এতে আমচাষিরা লোকসানের মুখে পড়বেন। তবে খরায় আম ঝরে পড়া থেকে বাঁচতে অনেকেই গাছে পানি সেচ দিচ্ছেন। 

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন শামীম খান বলেন, গত ২০ বছরেও এমন তাপদাহ বা খরা দেখিনি। এ বছর প্রচ- শীতের পরে প্রচুর তাপ ও খরা হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। এমন দাবদাহ আরও কিছুদিন চললে আমাদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। বৈরী আবহাওয়া আর অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আম উৎপাদনের ব্যয় বাড়ছে। ফলে আমচাষি থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী কেউই স্বস্তিতে নেই। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান জানান, জেলার বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে আমচাষিরা কিছুটা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারবেন। কৃষি বিভাগ আম উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তার কাছাকাছি যাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রচুর দাবদাহ বা খরা যাচ্ছে। এ খরায় কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমগাছে বেশি বেশি পানি সেচ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ঈশ^রদী ॥ প্রয়োজনীয় পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হলে এবং চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে ঈশ^রদীতে ১০ হাজার ১শ’ ২৫ হেক্টর জমির ধান ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবার ঈশ^রদীর সাত ইউনিয়নসহ পৌর এলাকায় ১৭শ’ হেক্টর জমিতে ধান, ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভিন্ন প্রকার শাক-সবজি, ৩শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে পাট ও পদ্মার চরাঞ্চলের ৭৫ হেক্টর করা বাদাম আবাদ করা হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া প্রচ- তাপপ্রবাহ ও খড়া শুরু হওয়ায় কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়তে থাকে। 

এই বিপর্যয় থেকে কৃষক ও ফসলকে রক্ষায় বিকেল থেকে সারারাত প্রতিটি ফসলের খেতে পানির স্প্রেসহ প্রয়োজনীয় সেচ ব্যবস্থা চালু রাখলে ফসলের ক্ষতি হবে না। ঈশ^রদী কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকারের দেওয়া তথ্যসূত্রে এসব জানা গেছে। সূত্রমতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধরন দেখে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং  কৃষকদের ফসলের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য নানাভাবে কাজ শুরু করেন।


 কর্মকর্তারা পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উঠোন বৈঠক ও পরামর্শসভা শুরু করেন। এ বছর ঈশ্বরদীর সাতটি ইউনিয়নে ১১০০৫ জন কৃষক, ৩১শ’ হেক্টর জমির ১১০০৫টি বাগানে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ২৪৩টি লিচু গাছে ১৫ লাখ মে. টন লিচু আবাদের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন। লিচুর সম্ভাব্য বিক্রি মূল্য ধরা হয়েছে সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকা। কিন্তু এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার লিচু চাষিরাও। তারাও অন্যান্য ফসল আবাদি কৃষকদের মতোই সম্ভাব্য ক্ষতির একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। কৃষকদের বুকভরা আশা ছিল এবার লিচুর রাজধানী  ঈশ^রদী এলাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হবে। 

বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষতির সম্মুখীন হবে লিচু চাষিরাও। তাপপ্রবাহের আক্রমণ থেকে লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনাকে রক্ষায় কৃষি অফিসের দায়িত্বশীলরা অন্যান্য ফসলের ন্যায় নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন কৃষকদের নিয়ে। কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিদিন মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে উঠোন বৈঠক, পরামর্শ সভা ও অব্যাহত রেখেছেন।

কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ মতে কৃষকরা সাত দিন সঠিকভাবে রাতে রাতে গাছের গোড়ায় পানি, ছত্রাকনাশক স্প্রে ও গাছের পাতা স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে পারলে লিচুর বাম্পার ফলনের ক্ষতি হবে না। এ অবস্থায় বিগত সপ্তাহখানেক ধরে ঈশ^রদীতে প্রচ- তাপপ্রবাহ ও গরম বাতাসে লিচুর মুকুল এবং গাছের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

এ অবস্থায় কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষকদের বিরামহীন চেষ্টা চলছে বাম্পার ফলন ঠিক রাখার। তারা নিয়মিত রাতভর গাছে গাছে পানির ও ছত্রাকনাশক স্প্রে এবং গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছে। তবে আগামী সাতদিনের বেশি সময় ধরে এই চলমান প্রাকৃতিক বিপর্যয় তীব্র তাপপ্রবাহ, গরম বাতাস অব্যাহত থাকলে ও বৃষ্টি না হলে বাম্পার ফলনে মারাত্মক বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও ॥ ঠাকুরগাঁও থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মৌসুমের শুরুতে ঠাকুরগাঁওয়ে আমের বাগান ও গাছগুলোতে দোল খাচ্ছিল শুভ্র সাদা লালচে ও সোনালি রঙের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। আর বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছিল ম-ম গন্ধ। চারপাশে ছড়াচ্ছিল মধু মাসের আগমনী বার্তা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আমের গাছগুলোতে বেশি মুকুল আসায় আমের বাম্পার ফলন বৃদ্ধিসহ ব্যাপক বাণিজ্যের স্বপ্ন দেখছিলেন জেলার আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

আশা করেছিলেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গত বছরের তুলনায় এবার আরও বেশি পরিমাণ বাইরের দেশে আম রপ্তানি করার। কিন্তু তীব্র তাপপ্রবাহ সকল স্বপ্ন ম্লান করে দিচ্ছে জেলার আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের। তবে অন্যান্য জেলার চেয়ে তুলনামূলকভাবে এ জেলার তাপপ্রবাহ কিছুটা সহনীয় এবং শেষ রাতে শীতের পরশ পাওয়া যাওয়ায় আমচাষিরা গাছে গাছে পানি স্প্রে করে আমের যতটুকু গুটি আছে তা ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তীব্র তাপপ্রবাহে জেলার বিভিন্ন রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙ্গিনায়, মাঠ-ঘাট ও আনাচে-কানাচে অধিকাংশ আম গাছের অর্ধেকের বেশি মুকুল ঝরে গেলেও এখনো অনেক গাছে শোভা পাচ্ছে আমের গুটি। 

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, হাড়ীভাঙ্গা, ফজলি, খিড়সাপাতি, আম্রপালী, মোহনা, রাজভোগ, রূপালি, গোপালভোগ, সূর্যপূরী, বান্দিগড়সহ বিদেশী জাত বানানা ম্যাংগো, কিং চাকাপাত, নাম দোকমাই, চিয়াংমাই, আলফান শো, রেডপালমারসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছের গুটি ধরে রাখতে এবং গাছের পরিচর্যা ও পোকা দমনে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আমচাষি ও বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা।

বিগত বছরগুলোতে এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ না হলেও গত দুই-তিন বছর ধরে আমের বাণিজ্যিক চাষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যেসব জমিতে অন্যান্য ফসল কম হয়, সেসব জমিতে আমের বাগান করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছিলেন কৃষক। তাই জেলায় দিন দিন আমের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছিল।  

জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলায় মোট এক হাজার ৮শ’ ৪৪টি আম বাগান রয়েছে, যার আয়তন প্রায় তিন হাজার ২শ’ ৩৬ হেক্টর। এ ছাড়া বসতবাড়িসহ চার হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতেও আম গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে এবার প্রায় ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছিলেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

আবহাওয়া ভালো থাকলে গতবারের তুলনায় এ বছর ব্যাপক আম উৎপাদন হবে ও আম থেকে ভালো আয়ের আশা করছিলেন বাগান মালিকরা। জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার করনাইট গ্রামের আমচাষি রহিম উদ্দিন সাবু প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির আমের বাগান করেছেন। 

তিনি বলেন, আমরা দুই ভাই মিলে ১০-১২ বছর আগে আমের এই বাগান করেছি। আগে বাগানের এই জমিগুলোতে তেমন ফসল হতো না। বিভিন্ন ফসল গম, সরিষা চাষ করতাম, কিন্তু তেমন ফলন ভালো হতো না। তবে এখন এইসব জমিতে আম গাছ রোপণের দুই-তিন বছর পর থেকেই ফল দেওয়া শুরু করেছে। তাতে আমরা অন্যান্য ফসলের চেয়ে আমবাগান করে বেশি লাভবান হচ্ছিলাম। 

মকসেদুর রহমান ওরফে রাজু নামে বাগান মালিক বলেন, আগে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলায় আমের তেমন বাগান ছিল না। এখন বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ করছেন অনেকে। দিন দিন বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আমবাগান থেকে বছরে মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাচ্ছিল। তাই মানুষ আম চাষের দিকে ঝুঁকছিলেন। কিন্তু এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে অনেক গাছের মুকুল ঝরে গেছে।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0