আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Another round of rising costs!

আরেক দফা বাড়ছে খরচের বোঝা!

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশিত: ০৯ মে, ২০২৪, ১০:০০ এএম

আরেক দফা বাড়ছে খরচের বোঝা!

দেশে একদিনেই ডলারের দাম বাড়লো রেকর্ড ৭ টাকা। ডলারের ব্যাংক রেট এখন ১১৭ টাকা, খোলাবাজারে যা আরও বেশি। আমদানির জন্য এলসি খুলতে গেলেও এ দামে ডলার মিলবে না বলে মনে করেন আমদানিকারকরা। এতে বাড়বে আমদানি খরচ। মূল্যস্ফীতি বাড়বে আরও। আমদানিনির্ভর পণ্যগুলো কিনতে হবে আরও বেশি দামে। সার্বিকভাবে আরেক দফা বাড়ছে খরচের বোঝা।

আগের সব রেকর্ড ভেঙে হঠাৎ ডলারের এ দাম বাড়া ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন দেশের পণ্য আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরেই দেশে ডলার সংকট চলমান। যেসব নিত্যপণ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলোর ঋণপত্র খুলতে অনেক ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামে ডলার কিনতে পারেননি। দিতে হয়েছে বাড়তি দাম। যার প্রভাব রয়েছে বর্তমান নিত্যপণ্যের বাজারে।

সেই বাজারে নতুন এ অস্থিরতায় আবারও আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়বে। বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ (দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি) পদ্ধতিতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। এখন ডলারের জন্য গুনতে হবে আগের চেয়েও বেশি।

এ বিষয়ে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়াটা আমাদের (আমদানিকারকদের) জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হবে। এটা আমাদের এখন সমন্বয় করতে গেলে পণ্যের দাম বাড়বে। যে পদ্ধতিতে ডলারের দাম নির্ধারণের কথা বলা হচ্ছে, সে দামে ডলার মিলবে না। বরং এ দাম বাড়িয়ে নির্ধারণের জন্য এলসি খুলতে আরও ৭ টাকা হয়তো বেশি খরচ হবে।’

তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছি। জানিও না পরিস্থিতি কী হবে। সবশেষ ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ১১০ টাকা ছিল। তখন এলসি খোলার জন্য ১২০-১২২ টাকা দরে ডলার কিনেছি। এখন যদি আরও বাড়ে তবে পরিস্থিতি কী হবে।’

তসলিম শাহরিয়ার বলেন, ‘সরকার যে পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দরের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে, সেটা যদি হয় তবে ব্যবসা করা সম্ভব। কিন্তু সেটা যদি ঠিকমতো না হয়, দাম আরও বেশি বাড়লে খুব বিপদ হবে।’

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ‘আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতির বেশির ভাগই আমদানি করে আনতে হয়। ডলারের দাম বাড়লে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বে আমদানিকারকরা। ডলারের অপ্রতুলতায় বেশির ভাগ ব্যাংকই এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে, এ প্রবণতা বাড়বে। আমদানি কমে পণ্যের দামও বাড়বে।’

বেশ কয়েক মাস ধরেই ডলারের বাড়তি দামের কারণে খুচরা বাজারে বেড়েছে আমদানি করা নিত্যপণ্যের দাম। যদিও দেশে বছরের খাদ্যশস্য ও মসলার যে চাহিদা তার প্রায় সবই কিছুটা উৎপাদন হয়। কিন্তু এর বাইরে বড় অংশের খাদ্যশস্য এবং অন্য পণ্য আমদানি করতে হয় পুরোপুরি জোগান মেটাতে। যে কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দামে ডলারের সবচেয়ে বড় প্রভাব থাকে।

বিশেষ করে চিনি, পাম তেল, সয়াবিন তেল, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, আদা, মরিচ, গম, চাল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, তেলবীজ রয়েছে শীর্ষ খাদ্যসামগ্রী আমদানির মধ্যে। এছাড়া সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সাবান, শাম্পু থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বাড়বে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দেশ আমদানিনির্ভর। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের অর্থনীতি চাপে আছে। এখন হঠাৎ করেই ডলারের দাম খুব বেশি হলে এর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হবে। বিশেষ করে আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। এতে পণ্যের দামও বাড়াতে বাধ্য হবেন আমদানিকারকরা। এতে চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ। মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে, মানুষ কষ্ট পাবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের রেট ১১৭ টাকা নির্ধারণ ক্রলিং পেগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো। তবে সেটা কঠিন। খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেটা না হলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার সম্ভাবনা অবশ্যই রয়েছে।’

দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) এক বৈঠকেও সেটি স্বীকার করা হয়েছে। ওই বৈঠকে অর্থনীতির দুটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে মূল্যস্ফীতির অব্যাহত উচ্চহারের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের ক্রমাগত অবক্ষয়কে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ডলারের এ দরবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ আরও শক্তিশালী করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের করের মতো, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ বাড়ায়। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি বাড়লে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বাড়ে। এমনিতেই এখন বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সঙ্গে পোশাক, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ পরিবহন খাতেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির পরপরই সেগুনবাগিচা বাজারে একজন ক্রেতা হালিমুল রেজা বলেন, ‘শুনলাম ডলারের দাম বেড়েছে। জানি সব পণ্যের দাম এখন বাড়বে। মাসের শুরুতে সংসারের কিছু কেনাকাটা বাকি। সেজন্য তাড়াহুড়া করে বাজারে এলাম। কাল সকালেই হয়তো পণ্যের দাম বাড়বে। কারণ দেশে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য শুধু অজুহাত প্রয়োজন। যৌক্তিক কারণ থাকলে তো কথাই নেই।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0