আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Khapra Ward of Rajshahi Jail

অধিকার আদায়ে রক্তে রঞ্জিত হল রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ড

Bijoy Bangla

ওয়ালিউর রহমান বাবু

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ০৮:৪৭ এএম

অধিকার আদায়ে রক্তে রঞ্জিত হল রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ড
অধিকার আদায়ে রক্তে রঞ্জিত হল রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ড

নানা অপ্রত্যাশিত ঘটনায় ভারত বর্ষ ভেঙ্গে সৃষ্টি হল পাকিস্তান। এ রাষ্ট্র নিয়ে যারা স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যে তাদের সে স্বপ্নে ছেদ ঘটতে থাকে। সৃষ্টি হল ভাষা আন্দোলন এ আন্দোলন যখন ক্রমে তীব্র হতে থাকে তখন রাজশাহী কারাগারে  সৃষ্টি হল রক্তের এক ইতিহাস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারাগারে বন্দি শিবিরে নির্যাতন হত্যাকান্ডের ঘটনা শোনা যায়। বিভিন্ন মাধ্যমে তা জানতে পাওয়া গেলেও নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের পূর্ব অঞ্চলের রাজশাহী জেলা সদরের কারাগারে ১৯৫০ সালে যে নির্যাতন হত্যাকান্ড ঘটেছে তা নানা ঘটনার পিষ্ট হয়ে তা কেবল মাত্র গুটি কয়েক ব্যক্তি আর মুক্ত চিন্তা ভাবনাকারীতের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। অথছ তখন এ ঘটনাটি সে সময়ের অত্যান্ত একটি ঘটনা বহুল অধ্যায়। ঘটনাটি সর্ম্পকে অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা পাওয়া যায় তা হল  যারা সেদিন জীবন উৎসর্গ করেছেন অবদান রেখেছেন তারা কমিউনিস্ট, বামপন্থী, মুক্ত চিন্তার প্রগতিশীল তাই তাদের কথা বলা যাবে না। তাদের কথা তেমন ভাবে কেউ বলে না। আবেদন অনুরোধ করেও তেমন একটা সাড়া পাওয়া যায় না। কিন্তু তারাই গন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন অবদান রেখেছেন। সালটি ১৯৪৯ মার্চ মাস। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদের্শিক পরিষদে রাজ বন্দিদের রাষ্ট্রদ্রহী বলে বিল করা হলে এর প্রতিবাদে রাজ বন্দিরা সোচ্চার হন । ভারত বর্ষ খন্ডিত হয়েও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও বিট্রিশ আইন কানুন এর বিট্রিশ কর্ম কান্ডের প্রভাব তখনো ছিল। রাজশাহী জেলা কারাগারে একটি মাটির ঢালির ছাউনির ওয়ার্ড ছিল। এই ওয়ার্ডটিই খাপড়া ওয়ার্ড নামে পরিচিত। এখানে সে সময় বন্দি রাখা হয় কমিউনিস্টি, বামপন্থী, মুক্ত চিন্তার প্রগতিশীল রাজ বন্দিদের। তাদের কেউ ছিলেন রাজনিতিবিদ, কেউ সংগঠক, কেউ শ্রমিকনেতা কেউ ছাত্র নেতা।

সে সময় বন্দিদের দিয়ে অমানুষিক অমানুবিক পরিশ্রম করিয়ে নেয়া হতো। তাদের উপর করা হতো অমানষিক অমানবিক নির্যাতন। দেয়া হতো নিম্ন মানের খাবার। এর প্রতিবাদে বন্দিরা প্রতিবাদ জানিয়ে হয়ে যান ঐক্যবদ্ধ হয়ে মান। তারা ভাল খাবার রাজ বন্দিদের ডিভিশন ও নির্যাতন বন্ধের দাবী জানান কিন্তু কর্তৃপক্ষ এতে ভুক্ষেপ না করলে প্রতিবাদ তীব্র হয়। বন্দিরা অনশন শুরু করলে তাদের জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টাটি ব্যর্থ হয়। কারাগারে প্রধান মিষ্টার বিল বন্দিদের সাথে কথা বলার নামে কয়েকজন কে নিয়ে ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল খাপড়া ওয়ার্ডে সেখানে গেলে সেখানকার এক বন্দির সাথে তার বিবাদ শুরু হয়। বন্দিটিকে তিনি প্রহার করতে গেলে পরিস্থিতি অন্য রূপ ধারন করে। পুরো কারাগারে উত্তাপ্ত হয়ে উঠে। বন্দিদের নামে অভিযোগ প্রচারে কৌশলে পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে জানালা দিয়ে গুলি করে রাজশাহী ও রংপুরের রেল শ্রমিক বিজলী ধার, সুধীর ধার, দিনাজপুরের কম্পরাম সিংহ, কুষ্টিয়া মোহনী দিনের হানিফ শেখ ময়মন সিংহ আনন্দ মোহন কলেজের (সম্মান) ছাত্র সুখেন্দ ভট্রাচার্য, খুলনার দৌলতপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছাত্র ফেডারেশনের আনোয়ার হোসেন, লাল ঝান্ডা নেতা দেলোওয়ার হোসেন কে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই সাত শহিদের সালে আহত হন বত্রিশ জন বন্দি। বাম রাজনিতীবিদ, শ্রমিক নেতা, ছাত্র নেতা ও বিদ্রোহী কমরেডদের রক্তে রঞ্জিত হয় খাপড়া ওয়ার্ড। বিপ্লবী কমরেডদের রক্ত জীবন দান হন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা সহ অন্যান্য আন্দোলেন কে সানিত করে। সেদিন তাদের আত্বত্যাগের কথা অবদানের কথা রক্তে গড়া ইতিহাস অন্যান্য কথার ফুলঝুড়িতে ধামাচাপা পরে যায়। সেদিনের সেই ইতিহাস নিয়ে তেমন কোন উৎদ্যেগ দেখা যায়না। উদ্যেগের চেষ্টা করা হলেও তা থাকে সীমাবদ্ধতার মধ্যে।

লেখক: মুক্তি যুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজশাহী ।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0