আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, বুধবার, মে ২২, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Chawkbazar Iftar

দেড় কেজি ওজনের শাহী জিলাপিতে নজর সবার

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ২০ মার্চ, ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম

দেড় কেজি ওজনের শাহী জিলাপিতে নজর সবার
দেড় কেজি ওজনের শাহী জিলাপিতে নজর সবার।....সংগৃহীত ছবি

গরম ফুটন্ত তেলে বিশেষ কায়দায় পেঁচিয়ে ছাড়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় সব উপকরণে মিশ্রিত ময়দা। মচমচে ভাজা হওয়ার পর তা ভেজানো হচ্ছে ঘন চিনির দ্রবণে। এরপর রসে ভিজে ভরপুর হলেই তুলে রাখা হচ্ছে বিক্রির জন্য। আসলে এগুলো কোনো সাধারণ জিলাপি নয়। এর নাম ‘শাহী জিলাপি’। এর কোনটির ওজন এক কেজি, কোনটির ওজন দেড় থেকে দুই কেজি। তবে, ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী এর থেকেও বড় অর্থাৎ পাঁচ থেকে ছয় কেজি ওজনের জিলাপি বানাতেও দক্ষ এখানকার কারিগররা।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেড় প্যাঁচ বা পনেরো প্যাঁচের জিলাপির কথা সবাই শুনলেও শাহী জিলাপি তৈরির প্রক্রিয়া পুরোপুরি ভিন্ন। তেলে প্রস্তুত করা ময়দা ছাড়ার সময় কারিগরের অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পায়। হাতের আন্দাজে তিনিই ঠিক করেন এর ওজন কত হবে। সচারাচর এক থেকে দেড় কেজি ওজনের শাহী জিলাপি বেশি তৈরি করেন তারা। কারণ সাধারণ পরিবারে এর থেকে বড় ওজনের জিলাপি প্রয়োজন হয় না। এর বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বড় কোনো অর্ডার পেলে তখন পাঁচ-ছয় কেজি ওজনের জিলাপি তৈরি করা হয়।


বুধবার (২০ মার্চ) সরেজমিনে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী চকবাজারে ঘুরে দেখা যায়, বেশ বড়সড় আকার ও নানান ডিজাইনের শাহী জিলাপি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মূলত, আগে থেকেই আটা-ময়দাসহ অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে গুলিয়ে রাখা ‘কাঁচা গোলা’ দুপুরের পর থেকেই ধীরে ধীরে প্রস্তুত করা হয়। কিছুটা বিকেল হলেই শুরু হয়ে যায় শাহী জিলাপি তৈরির প্রক্রিয়া। 

পুরান ঢাকার চকবাজারে এসব জিলাপি একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্করণ যা, সমগ্র ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষের কাছেই অত্যন্ত সুপরিচিত। বিশেষ করে শবে বরাত এবং রমজান মাসে এটি বেশি পরিমাণে তৈরি হয়। ঢাকার নবাবদের রান্নাঘর থেকে এই জিলাপির উদ্ভব হয়েছে বলেই এর নাম ‘শাহী জিলাপি’— এমন মন্তব্যও করেন অনেকে।

রবিউল হুসাইন নামের এক কারিগর বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে আমি এই বিদ্যা অর্জন করেছি। আমরা আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে জিলাপি বানাই। একেবারে ছোট থেকে শুরু করে অনেক বড় জিলাপিও আমি বানাতে পারি। মাসকলাইয়ের ডাল, ঘি, বেসন, ময়দা, ডালডা, চিনির সিরাপ ও তেলসহ নানান উপাদান প্রয়োজন হয়। আবার বেশি ভারি হয়ে গেলে মচমচে হয় না। সেজন্য খুব সতর্কতার সাথে জিলাপির প্যাঁচগুলো দেওয়া হয়। একটি প্যাঁচের ওপর যদি আরেকটি প্যাঁচ বেশি গাঢ় হয়ে যায়, তাহলে সেটি আর মচমচে হয় না। সেজন্য খুব সতর্কতার সাথে আমরা এই জিলাপি তৈরি করি।

তিনি বলেন, রমজানে শাহী জিলাপি ছাড়াও প্যাঁচ জিলাপি, চিকন জিলাপি ও রেশমি জিলাপির চাহিদা রয়েছে।


আব্বাস হামিদ নামের এক শাহী জিলাপি বিক্রেতা বলেন, শাহী জিলাপি পুরান ঢাকার ঐতিহ্য। ঢাকার নবাব আমল থেকে এই রেসিপি এসেছে। এই জিলাপি প্যাঁচে-প্যাঁচে বানানো হয়। একেকটি জিলাপির ব্যাস হয় কয়েক ইঞ্চি এবং ওজন এক, দেড়, দুই কিংবা আড়াই কেজি পর্যন্তও হয়। মানুষজন ইফতার অথবা পারিবারিক অনুষ্ঠানে কয়েকজন মিলে এটি খাওয়ার জন্য নিয়ে যায়। এগুলো শুধু আকারেই বড় নয়, বরং খেতেও বেশ সুস্বাদু।

পাশেই আরেকটি দোকানে ডাক তুলে বিক্রি করতে দেখা যায় শাহী জিলাপি। সেখানে থাকা আব্দুল হালিম নামের বিক্রেতা বলেন, গরম গরম, মচমচে ভাজা শাহী জিলাপি একটা কিনলে পুরো পরিবারের সবাই খেতে পারবেন। আমার দোকানে তিন রকমের জিলাপি রেখেছি। সবচেয়ে বড়টা অর্থাৎ শাহী জিলাপি ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। এরপরে আছে মাঝারি আকার, যার কেজি ৩৪০ টাকা এবং ছোট শাহী জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আবার ক্রেতারাও বেশ আগ্রহ নিয়ে পরিবারের জন্য কিনে নিয়ে যান এই ঐতিহ্যবাহী শাহী জিলাপি।

মইনুল হোসেন নামের স্থানীয় এক ক্রেতা বলেন, পুরান ঢাকা মানেই ভোজন রসিকদের কাছে খুব পরিচিত নাম। রমজান মাসে তো কথাই নেই। আমরা ছোট থেকেই এই শাহী জিলাপি খেয়ে আসছি। একসময় অনেক অভিজ্ঞ কারিগররা ছিল, যারা অনেক মচমচে জিলাপি তৈরি করত। এখন এগুলো আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। তারপরও ইফতারের জন্য এই জিলাপি প্রায়ই নিয়ে যাই৷ খেতেও মন্দ নয়৷



google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0