ভালোবাসো অন্ধ, পাগলের মতো ভালোবাসো, এমন শব্দগুলো সমাজে অতি পরিচিত হলেও এই সময়ে অন্ধ আর পাগলের মতো ভালোবাসা সব সময় সুখকর হয় না। ভালোবাসলেও এখন অন্ধ হয়ে বিশ্বাস করা যায় না, আবার পাগলের মতো ভালোবেসে নিজের চরম সর্বনাশও করা যাবে না। কারণ কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসায় প্রতারিত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে নানা ধরন আর মাধ্যমে।
সম্প্রতি গণমাধমে প্রকাশ পায়, কলেজে পড়াকালীন ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক এবং তারপর ফাঁদে পড়ে শেয়ার করা ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর জিম্মি হওয়ার ঘটনা। তিন বছর ধরে জিম্মি হন বিশ্ববিদ্যালয় উক্ত ছাত্রী। ডিজিটাল প্ল্যাটফরম আর ভুবনবিস্তৃত
ইন্টারনেট ভালোবাসাকে সহিংসতায় রূপ দেয় কখনো কখনো। জীবনের বর্ণিল সময় বদলে যায় ধূসর রঙে। এর প্রভাব শুধু ব্যক্তির ওপর নয়, পড়ে তার পরিবার সমাজ আর দেশের ওপর। তাই ভালোবাসলেও কিছু বিষয় সতর্ক হতে বলেন সাংবাদিক সাহিত্যিক শাহনাজ মুন্নী—তিনি বলেন, ‘খুবই স্পর্শকাতর বিষয় বটে, যদিও ভালোবাসলে লাভক্ষতি, ভালোমন্দ, বিচার বিবেচনা কিছু মানে না—কিন্তু কিছু আচরণ আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেসব বিষয় আমাদের সতর্ক হতে হবে। এখন কেউ কেউ নুড ছবি তুলতে এবং সেই ছবি ভালোবাসার মানুষকে পাঠাতে পছন্দ করি—এটি একদমই করা যাবে না। আবার প্রেমিকযুগল ঘনিষ্ঠ হতে চায়। প্রেমিকের কাছ রাজি হতে চাপও দেওয়া হয়, এমন প্রস্তাবেও রাজি হওয়া যাবে না। পরিবারে এমন একজন বন্ধু থাকতে হবে, যেন সব বিষয় তাকে বলা যায়।’ এতে গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পারিবারিক বন্ধন ও শিক্ষা দৃঢ় করার সঙ্গে সৃজনী ও শিল্পকলার জগতে বিচরণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক শিশু সাহিত্যিক আনজির লিটন।
তিনি বলেন, ‘এখনকার শিশুরা একটু বেশিই আবেগপ্রবণ, সেই অনুযায়ী তাদের নিজেদের চিনতে পারার দক্ষতা কম। নিজেকে আবিষ্কার করার ক্ষমতা তার তখনই হবে যখন সে গান, নাচ, আবৃত্তি, ছবি আঁকার মতো শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত হবে। এগুলো যে শিশু-কিশোররা করছে না, তাও নয়। তবে আরো বাড়াতে হবে।’
ভালোবাসার প্রচলিত সংস্কার থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শ দেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বয়স অনুযায়ী বাবা-মা অভিভাবক শিশু ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সুষ্ঠু ভালোবাসার গল্প করতে হবে। আমাদের সমাজে বাবা-মায়ের ভালোবাসা প্রকাশকে ভিন্ন চোখে দেখা হয়, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বরং ভালোবাসার মানুষের প্রতি যে সম্মানবোধ, দায়বদ্ধতা, সততা থাকতে হবে, তার শিক্ষা বাবা-মায়ের ভালোবাসা ও সম্মানাবোধ থেকে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ—আবেগ, প্রতিশ্রুতি এবং সম্মানবোধ। এই তিনটির সমন্বয়ে দৃঢ় ভালোবাসা নাকি শুধুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় পার করা, তা নিশ্চিত হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার অন্যতম অনুষঙ্গ যৌনতাকে কোনোভাবে অস্বীকার করা যায় না। এতে তরুণরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। তবে শুধু যৌনতাকে উপজীব্য করে ভালোবাসা হয় না। এতে ঝুঁকি বাড়ে, তাদের এ উপলব্ধি জরুরি।’
অচ / বি