আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, মঙ্গলবার, মে ২১, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Severe burns

সেচ খরচ গুণতে গিয়ে দিশেহারা মেহেরপুরের চাষিরা

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১ মে, ২০২৪, ০২:৫০ এএম

সেচ খরচ গুণতে গিয়ে দিশেহারা মেহেরপুরের চাষিরা
সংগৃহীত ছবি

চলতি মৌসুমে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে মেহেরপুরের জনপদ। এমন অবস্থায় ক্ষরার কবলে পড়েছে বোরো ধানের আবাদ। তাই অনাবৃষ্টি আর অব্যাহত ক্ষরায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের চাষ নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন মেহেরপুর জেলার চাষিরা। সেচ খরচ গুণতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন তারা।

টানা দাবদাহে মাঠে লাগানো বোরো ধানের গাছ এখন হলুদ রং ধারণ করতে শুরু করেছে। শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের শিষ। সেচ দিতে দিতেই শুকিয়ে যাচ্ছে জমি।

কৃষকরা বলছেন, পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে, আবার মাটি শুকনা থাকায় দ্রুত শুষে নিচ্ছে পানি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূরক সেচ দিয়ে বোরো ধান টিকিয়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। তবে এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।


কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, মেহেরপুর জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। তবে চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৯৭ হেক্টর। বর্তমানে ধান শীষে রূপ নিয়েছে। এমন সময় ক্ষরার কবলে পড়েছে বোরো আবাদ।

সদর উপজেলার কৃষক মিলন হোসেন জানান, তীব্র দাবদাহে ধানের জমির মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে। জমিতে এখন প্রতিদিন সেচ দেওয়া লাগছে। এদিকে অতি দাবদাহের কারণে শ্যালো ম্যাশিনে পানি উঠছে কম। ফলে সময় বেশি লাগায় দুই লিটার ডিজেলের পরিবর্তে কোনো কোনো জমিতে প্রতিদিন চার লিটার করে ডিজেল খরচ হচ্ছে। এতে বোরো ধান চাষের উৎপাদন খরচ বেড়ে হয়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। ফলে এবার বোরো ধান চাষে লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

মুজিবনগর উপজেলার কৃষক সোহানুর রহমান জানান, ক্ষরায় শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের শীষ। পাশাপাশি বেড়েছে পোকার আক্রমণ। বিষ দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। যে জমিতে সপ্তাহে তিনদিন সেচ দিয়েই চলতো সেই জমিতে এখন প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে এবার।


একই উপজেলার কৃষক কামাল হোসেন জানান, এ বছর তীব্র দাবদাহের কারণে ধানচাষে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।

চাষিদের দাবি, লোকসান থেকে বাঁচাতে ধানের দাম যেন মণপ্রতি ১৫ থেকে ১৬শ টাকা থাকে। তা না হলে অনেক লোকসান হয়ে যাবে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরতাপে ব্যাহত হচ্ছে ফসলের চাষ। আর বোরো ধান চাষে প্রতিটি সেচ বাবদ ৩০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। কৃষকরা সেচ পাম্পের মালিকের সঙ্গে মৌসুম চুক্তি করেও সেচ দিচ্ছেন। এতে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে এ বছর সাত থেকে আট হাজার টাকা অতিরিক্ত সেচ খরচ গুণতে হচ্ছে।


পিরোজপুর গ্রামের কৃষক আরিফুর রহমান জানান, এ বছর আমার তিন বিঘা জমিতে ধানের চাষ আছে। বৃষ্টি না হওয়ায় তীব্র দাবদাহের কারণে প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। একদিকে যেমন সার, বিষ, কীটনাশক ও ডিজেলের দাম বেশি, তার ওপর অতিরিক্ত সেচ খরচ দিতে গিয়ে কৃষকরা এবার পথে বসার অবস্থা।

কাঠালপাতা গ্রামের কৃষক নোহন আলী জানান, ক্ষরার কবলে পড়েছে জেলার প্রধান ফসল বোরো ধান চাষ। অন্যান্য বছর বোরো ধান চাষের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। কোনো ধরনের সেচ দিতে হয় না। কিন্তু এ বছর বৃষ্টির মুখ দেখা যায়নি। আমার দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ রয়েছে। এখন জমিতে প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। অনাবৃষ্টির কারণে ধান ওঠা পর্যন্ত শুধু সেচ খরচ বাবাদ আমার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, এবার দীর্ঘদিন ক্ষরা চলছে। ফলে জমির মাঝে মাঝে কিছু শীষ মরে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জমিতে সেচ দিয়ে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি জমিয়ে রাখার এবং পোকামাকড় দমনে কীটানাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0