আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, মঙ্গলবার, মে ২১, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Fazle Hossain Badsha

নৌকা পেয়েও কেন ধরাশায়ী বাদশা

Bijoy Bangla

আবুল কালাম আজাদ( রাজশাহী):-

প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৪:৫৮ পিএম

নৌকা পেয়েও কেন ধরাশায়ী বাদশা
ফজলে হোসেন বাদশা

রাজশাহী-১ ( সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির (পলিট ব্যুরোর সদস্য) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের জোটপ্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বিশাল ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন অধ্যক্ষ বাদশার কাছে। ফলে নৌকা পেয়েও ধরাশায়ী হয়েছেন রাজশাহীর এই আসনে টানা তিনবারের নির্বাচিত এমপি ফজলে হোসেন বাদশা।

নৌকার টিকিটেই তিনি ২০০৮ সাল থেকে এমপি ছিলেন। কিন্তু জনবিচ্ছিন্নতা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সংকট, বৈরিতা, নিজ দলের নেতাকর্মী স্বল্পতা- সংকট,এবং তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার মতো দলীয় এজেন্ডা না থাকায়  নৌকাসহ তিনিও ডুবেছেন। সঙ্গে এমন কি নিজ কেন্দ্রেও ফেল করেছেন তিনি । 

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন মাত্র ৩১ হাজার ৪৬০ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা কাঁচি প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫ হাজার ১৫৬ ভোট। ফলে প্রায় ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।  

তার নিজ কেন্দ্র জুলফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ও মোট ভোটার ২ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৫৩৫টি। বাতিল হয়েছে ১২টি। স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা পেয়েছেন ৩৪০ ভোট। আর ফজলে হোসেন বাদশা পেয়েছেন মাত্র ১৭৩ ভোট।

জানা গেছে, রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ সদর (রাজশাহী-২) আসন। এ আসনটি সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কারলে এখানে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে ১৪ দলীয় জোটের কোটায় নিজ দলের প্রতীক হাতুড়ি-কাস্তে ফেলে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা নৌকার প্রতীকে নির্বাচন করে আসছিলেন। 

শরিক কোটায় এবারো চতুর্থবারের মতো নৌকা পেয়েছিলেন বাদশা। এতে চরম নাখোশ ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। কারণ, বাদশার ওয়ার্কার্স পার্টির কোনো ভোটব্যাংক নেই রাজশাহীতে। কেবলমাত্র দলের বড় একটি পদে থাকার কারণেই জোটের বিশেষ বিবেচনায় আওয়ামী লীগের ভোটে ১৫ বছর ধরে রাজশাহীর মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনের এমপি ছিলেন তিনি। অথচ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈরিতায় জড়িয়েছিলেন তিনি।  

সিটি খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছিলেন। এবার নৌকা প্রতীক পেয়েও লিটনের সঙ্খাগে দেখাও করতে যাননি বাদশা। এসব কারণে বাদশার সঙ্গে আওয়ামী লীগের চরম বৈরিতা সৃষ্টি হয়। এজন্য বাদশাকে নৌকা থেকে নামাতে ভোটের আগে মহানগর আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবেই মাঠে সোচ্চার ছিল। দলের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে জেতাতে মরিয়া ছিলেন। এমপি থাকাকালে নির্বাচনী এলাকায় নামে-বেনামে অসংখ্য ভূয়া প্রকল্প তৈরি করে সরকারি টাকা লোপাটের অভিযোগ ছিল ফজলে হোসেন বাদশার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে টিআর বরাদ্দের টাকা ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনে ব্যয় করেন তিনি। 

নিজ দলের নানা নামেমাত্র সংগঠনের নামে সরকারী টাকা ঢেলেছিলেন। বাম রাজনীতিক বাদশার এমন অনিয়ম ও দুর্নীতর খবরে প্রকাশ্যে আসলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, বাদশা আওয়ামী লীগের ভোটের মুখাপেক্ষী হয়েও এই দলের নেতাকর্মীদের কোনো কাজে আসেননি। ফলে বাদশার পরাজয়ের নেপথ্যে এটিও অন্যতম প্রধান কারণ। 


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়ার্কার্স পার্টির যুব ও ছাত্রসংগঠনগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় বাম আদর্শের চর্চা হওয়ায় তরুণ প্রজন্ম বেশ উজ্জীবিত হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই চর্চা আর নেই। তরুণদের স্বপ্ন জাগানোর মতো কোনো কার্যক্রমও নেই। ফলে নামেমাত্র রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায়নি। এক ব্যক্তিকে ঘিরে কখনো একটি রাজনৈতিক দল চলকে পারে না। ফলে নিজস্ব নেতাকর্মীও হারিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। 


তিনবার এমপি হলেও জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন বাদশা। বার্ধক্যজনিতসহ নানা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতেন না। পারিবারিকভাবে ও ঘরোয়া পরিবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়েই ছিলেন। এ কারণে নিজের পায়ে ভর করে ভোটে সফল হতে পারেননি বাদশা।


ভোটে পরাজয়ের কারণ জানতে ৮ জানুয়ারী  সোমবার দুপুরে ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘আমি এখনই প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। একটু অপেক্ষা করেন। 


তবে মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস প্রামাণিক দেবু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ১৪ দলের জোট ছিল। জোটবদ্ধভাবেই আমরা অতীতে নির্বাচন করে এসেছি। কিন্তু এবার মহানগর আওয়ামী লীগের একটা অংশ ষড়যন্ত্র করে ১৪ দলের জায়গাটা ক্ষতিগ্রস্ত করল।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0