আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, মঙ্গলবার, মে ১৪, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Date jaggery fair in Jessore

ঐতিহ্যে ধরে রাখতে যশোরে খেজুর গুড়ের মেলা

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারী, ২০২৪, ১২:০৪ পিএম

ঐতিহ্যে ধরে রাখতে যশোরে খেজুর গুড়ের মেলা
ঐতিহ্যে ধরে রাখতে যশোরে খেজুর গুড়ের মেলা

বিগত কয়েক বছর ধরে কমে গেছে গাছির সংখ্যা। পায় হারিয়েই যেতে বসেছে শত বছরের যশোরের ঐতিহ্য খেজুরগাছ, রস আর গুড়। তবে বিপ্ত প্রায় এই ঐতিহ্যের আবারও প্রাণ ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারের মতো যশোরের চৌগাছায় আয়োজন করা হয়েছে তিনদিনব্যাপী খেজুর গুড়ের মেলা। উপজেলা প্রশাসনের এমন উদ্যােগ এ অঞ্চলের গাছিদের উদ্বুদ্ধ করেছে। 

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় উপজেলা পরিষদ বৈশাখি মঞ্চের সামনে মেলার উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। এ মেলা চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। 

মেলায় চৌগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন এবং চৌগাছা পৌরসভার জন্য একটি করে স্টল বরাদ্দ রাখা হয়। এছাড়া মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা এবং একটি সংস্থার পক্ষ থেকে খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন প্রকারের পিঠার দুটি স্টল দেওয়া হয়। এছাড়া স্কাউটসের সদস্যরা মেলায় রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি প্রথমবার গুড় মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তখন দুই শতাধিক গাছি তাদের গুড় ও পাটালি নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

মেলা উদ্বোধন উপলক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ বৈশাখি মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যশোর জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খেজুর গুড়, রস এটা যশোরের একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যশোরের অন্যান্য উপজেলার থেকে চৌগাছায় গাছির সংখ্যা বেশি। আমরা চেষ্টা করছি অন্যান্য উপজেলায় গাছিদের সহায়তা দিয়ে এ পেশায় উদ্বুদ্ধ করতে। 

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, অন্যান্য উপজেলায় গুড়ের মেলা করা গেলে আরও ভালো হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা জেলা প্রশাসন সহোযোগিতা করব। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এই ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবে এবং দেশবাসীর কাছে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ফুটে উঠবে।

এছাড়া এদিন মেলায় চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী, চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, খেজুরগাছ গবেষক সৈয়দ নকীব মাহমুদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মিজানুর রহমান মধু, সহকারী কমিশনার গুঞ্জন বিশ্বাস, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুবাশ্বির হুসাইন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর অঞ্চলের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং খেজুর রস ও গুড়কে অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে প্রসার ঘটাতে খেজুর গাছকাটায় গাছিদের উৎসাহিত করতে চৌগাছার সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা প্রথমবারের মত খেজুর গুড়ের মেলা শুরু করেন। তখন অলিখিতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি বাংলা সনের পহেলা মাঘ থেকে চৌগাছায় খেজুর গুড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হবে। তবে চলতি বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারনে মেলার সময় কিছুটা পিছিয়ে দেয়া হয়। এ বছর চৌগাছা উপজেলায় মোট খেজুর গাছির সংখ্যা প্রায় ১৪শ', এর মধ্যে ২০০ গাছিকে নানা সরকারি সহোযোগিতা দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

মেলায় অংশগ্রহণকারী উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর-চাকলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস  বলেন, তিনি ১২০ কেজি গুড় নিয়ে এসেছিলেন। মেলায় ৪০০ টাকা কেজি দরে গুড় বিক্রি করেছেন। আগের বছর মেলার প্রায় ১৫ দিন আগে থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিলো। তবে এবার গত শুক্রবার আমাকে ফোন করা হয়। এজন্য সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারিনি। এ কারনেই এবার মেলায় গাছি কম এসেছে। আর গাছিরা কম এলে মেলা জমজমাট হয় না।

নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাদেখানপুর গ্রামের গাছি জায়েদ আলী ২১ কেজি খেজুর গুড় নিয়ে গুড়ের মেলায় এসেছেন। ক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করতে ব্যস্ত তিনি। বেচাকেনার ফাঁকে তিনি বলেন, দিন দিন এই পেশা থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। তবে ইউএনও এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নানা উদ্যেগে গাছিরা আবারও এ পেশায় মনোযোগ দিয়েছে। খেজুর যশোরের ঐতিহ্য। এটা ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।'

স্বরুপদাহ ইউনিয়নের বাগারদাড়ি গ্রামে গাছি লিয়াকত আলী গুড়ের মেলায় ১৫ কেজি খেজুর গুড় নিয়ে স্টল দিয়েছেন। তিনি  বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটি। আমার খেজুরগাছ আছে ১৮০ টি। প্রতিদিন ৩৫/৩৬ ঠিলে রস হয়। বর্তমানে রস খুব ভালো হচ্ছে, গুড়ের দামও ভালো পাচ্ছি। 

তবে অংশগ্রহণকারী ও আয়োজকরা জানান, দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার থেকে মেলায় গাছির সংখ্যা বাড়বে। মঙ্গলবার মেলায় অতিথি হিসেবে থাকবেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শায়খ সিরাজ। এছাড়া বুধবার সমাপনীর দিনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।



google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0