আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, জুলাই ৮, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Dub price

হাসপাতাল-বাজারে ডাবের দামে কেন তারতম্য

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১ জুলাই, ২০২৪, ০৭:৩৮ পিএম

হাসপাতাল-বাজারে ডাবের দামে কেন তারতম্য
....সংগৃহীত ছবি

ডেঙ্গু-ডায়রিয়া বা অন্যান্য যেকোনো রোগীদের জন্য ডাব যেন এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে পরিণত হয়েছে। শীত কিংবা বর্ষা সব ঋতুতেই রোগীকে ডাব খাওয়ানো হয়। এটির এই চাহিদাকে ব্যবসায়ীরাও বানিয়ে নিয়েছেন ঢাল হিসেবে। যেকারণে এই ফলের দাম হাসপাতাল গেটে একরকম, আবার বাজার-ঘাটে অন্যরকম।

রোগীরা বলছেন, অসুস্থতাকে পুঁজি করে বাজারে ভোক্তাদের জিম্মি করছেন ডাব ব্যবসায়ীরা। তবে বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে ডাবের সরবরাহ কম হওয়ায় পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। এরপর পরিবহন খরচের সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন চাঁদা। বাধ্য হয়েই বাজারমূল্যের থেকে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

সোমবার (১ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রবেশ গেট ও কারওয়ানবাজার ঘুরে ডাবের দামের এই চিত্র দেখা গেছে।


সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএসএমএমইউয়ের প্রবেশ গেটে ছোট সাইজের প্রতি পিস ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, মাঝারি সাইজের ১২০-১৩০ টাকা এবং বড় আকৃতির ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে। আর রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গিয়ে এসব ডাবের দাম যথাক্রমে ৭০-৮০, ১০০ ও সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ কেউ যদি ঢাকার বাইরে কোনো গ্রাম এলাকায় এসব ডাব কিনতে চান, সর্বোচ্চ দাম পড়বে ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাস্থ্যকর পানীয়গুলোর মধ্যে ডাবের পানি অন্যতম। এই পানিতে আছে প্রচুর খনিজ, যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত শক্তি জোগানোর ক্ষেত্রে ডাবের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি নানা পুষ্টিগুণে ভরা ডাবের পানি মুহূর্তেই ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে রোগীর জন্য দুটি ডাব কিনেন মাহমুদুল হাসান নামের এক ব্যক্তি।  তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে আমার এক আত্মীয় ভর্তি আছেন। তার কাছে যাওয়ার জন্য দুটি ডাব কিনেছি। প্রতিটির দাম পড়েছে ১৪০ টাকা করে। অথচ এই ডাব আমরা ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনতে পারি। হাসপাতালের সামনে ডাবের দাম অনেক বেশি।


রহমান আবির নামে আরেক স্বজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বাবার শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণে প্রতিদিন ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। যে কারণে কিছুদিন ধরে নিয়মিত ডাব কিনতে হচ্ছে।

ডাবের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেই মালিবাগ থেকে ১০০ টাকায় যে ডাব কিনলাম, সেটি হাসপাতাল গেটে ১৫০ টাকা।এখানে উচ্চমূল্যে ডাব বিক্রি হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা কীভাবে কিনব?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ভ্যানে ডাব বিক্রি করেন মো. রমজান আলী। সবচেয়ে ছোট সাইজের একটি ডাব তিনি বিক্রি করছেন ১০০ টাকা করে। মাঝারি সাইজের ডাব বিক্রি করছেন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং বড় সাইজের ডাব বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত।

ডাবের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে ডাবের দামটা তুলনামূলক কম। বৃষ্টির দিনে ডাবের চাহিদা অনেকটাই কম থাকে। গরমে এ চাহিদা বেড়ে যায়। তখন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা প্রায় মানুষই ডাব কিনে খান। কিন্তু বৃষ্টির দিনে শুধু রোগী আর স্বজনদের কাছেই ডাব বিক্রি করতে হয়। যেখানে দিনে ১০০ ডাব বিক্রি করতাম, এখন দিনে সর্বোচ্চ ৬০-৭০টার মতো বিক্রি হয়।

রমজান আলী বলেন, হাসপাতালের সামনে দামটা একটু বেশিই। তবে কেন বেশি সেটি আমরা বলতে পারব না। প্রতিটি ডাবে আমরা সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত লাভ করি। যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করি, সেই জায়গাটার ভাড়া দিয়ে এই কয় টাকা লাভ করতে না পারলে তো চলা যাবে না।


রফিক মিয়া নামে আরেক ডাব বিক্রেতা বলেন, এই সময়টাতে এমনিতেই খুব বেশি ডাব পাওয়া যায় না। যেকারণে বাজারে ডাবের সরবরাহ বেশ কম। কিন্তু হাসপাতালের সামনে সবসময়ই ডাবের চাহিদা বেশি। মোটামুটি মাঝারি সাইজের একটা ডাব কিনে পরিবহণ খরচ দিয়ে জায়গামতো আনতেই ১০০ থেকে ১১০ টাকা খরচ পড়ে। এই ডাবটা যদি ১২০-১৩০ টাকা বিক্রি করতে না পারি, তাহলে তো আমার কিছু থাকবে না।

তিনি বলেন, একটা বড় সাইজের ডাব আমাদের ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা করে কিনতে হয়। বিক্রি করা যায় সর্বোচ্চ ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এখান থেকে আর কয় টাকা লাভ করা যায়? আবার দাম বেশি থাকলে মানুষও কিনতে চায় না। আমরা যদি কমদামে কিনতে পারি তাহলে কম দামে বিক্রি করতেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা ডাবের বাজার কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা জানান, ঢাকায় বেশিরভাগ ডাব আসে ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ থেকে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে গাছে ডাব কম থাকে। এছাড়া টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে গাছে উঠে ডাব নামানো যাচ্ছেন না। এসব কারণে বর্তমান বাজারে চাহিদার তুলনায় ডাবের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে।

কারওয়ানবাজারে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মাঝারি আকৃতি ডাব ১০০ টাকা এবং বড় সাইজের বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত।

ডাব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যস্বত্বভোগীরাই সবসময় ডাবের দাম বাড়ায়। বাজার থেকে কয়েক হাত ঘুরেই খুচরা পর্যায়ে একটি ডাবের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

কারওয়ান বাজারের ডাবের ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী বলেন, এই সময়টাতে ডাবের সরবরাহ বেশ কম। পরিবহন খরচ দিয়ে বাগান থেকে নিয়ে মাঝখানে পাইকাররা ৪০-৫০ টাকা লাভ করে। আমরা যে ডাব ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করি, এই ডাব খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি করেন।



google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0