আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, রবিবার, জুলাই ৭, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Brilliant student Nathan Baum

মেধাবী ছাত্র নাথান বম চাকরি না পেয়ে গড়লেন কুকি চিন

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল, ২০২৪, ০৬:০৯ পিএম

মেধাবী ছাত্র নাথান বম চাকরি না পেয়ে গড়লেন কুকি চিন
মেধাবী ছাত্র নাথান বম। সংগৃহীত ছবি

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বম সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা সাকুল্যে ৫-৬ হাজার। পার্বত্য এলাকার বান্দরবান জেলায় মূলত এই সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা পিছিয়ে পড়া, বমরা তাদের মধ্যে অন্যতম। এই বমদের মধ্যে এক ছেলে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। 

সেটা ১৯৯৬ সালের কথা। পড়াও শেষ করেন। কিন্তু পড়াশুনা শেষ করে নিজের জন্য নিজের গোষ্ঠীর জন্য যখন কিছু করার কথা, তা না করে তিনি পাহাড়ে গড়ে তুললেন এক সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ। 

পাহাড় বা সমতল সব মানুষের কাছেই এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি ভয়ের-আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও আতঙ্কের এক নাম সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম।

সম্প্রতি থানচি ও রুমায় দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় অভিযান চালিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে কুকি চিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে ব্যাংক লুটে কুকি চিন জড়িত এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। তবে থানচি থানায় গোলাগুলির ঘটনায় কুকি চিন জড়িত কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় বিজিবি।

বান্দরবানের বম সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই খুব দরিদ্র। নাথান বমের বেড়ে ওঠাও এমন একটি দরিদ্র পরিবারে। তারা ৫ ভাই, এক বোন। নাথান সবচেয়ে ছোট। তাঁর স্ত্রী চাকরিজীবী ও দুটি সন্তান আছে। বান্দরবানে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা শেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায়। সেখান থেকে স্নাতক করেন। যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা করেছেন বলেও জানা গেছে।

বাংলাদেশে কাজ করে এমন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় চাকরির জন্য আবেদন করেন নাথান। কিন্তু সেটি পাননি তিনি। এরপর নিজ এলাকায় রিসোর্টও করেন। কিন্তু সেখানেও সফল হতে পারেননি। ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর একটি এনজিও গড়ে তোলেন। কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে সেই এনজিও দাঁড় করাতে না পারার পর নাথান কীভাবে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে তুললেন সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারনা পাওয়া যায় না। নাথানের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা নিয়ে তাই এলাকায় আছে নানা আলোচনা। তবে নিশ্চিত করে কেউ কিছুই বলতে পারেন না। স্থানীয় ও তাঁর স্বজনরা শুধু এটুকই বলতে পারেন ২০১৮ সাল থেকে নাথান বমের মধ্যে কিছু অস্বাভাবিক আচরণ তারা দেখতে পান।

নাথান বমের সাথে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন একটি তথ্য সামনে আনে র‍্যাব। গত বছর র‍্যাবের এক সংবাদ সম্মলেনে এ বিষয় সামনে আনা হয়।

নাথান বমের বাড়ি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার এডেনপাড়া সড়কে। এই জাতিগোষ্ঠীর প্রায় সবাই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। নাথানও তাই। নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন। জেএসএসের এই ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাও ছিলেন। 

আরও পড়ুন:>> কুকি-চিনের প্রধান সমন্বয়ক গ্রেপ্তার

স্থানীয়রা মনে করেন এনজিও গড়ে তোলার সময় নাথান কিছু টাকা পেয়েছিল। যদিও তাঁর উৎস সম্পর্কে কেউই কিছু জানে না। সে সময় থেকে নাথান বম এলাকার মানুষকে বিশেষ করে যুবকদের একত্রিত করা শুরু করেন। প্রথম দিকে এলাকার মানুষ এটাতে খুব একটা পাত্তা দেননি। কিন্তু এক পর্যায়ে তারাও কিছুটা সন্দেহ করতে শুরু করেন। কেউ কেউ নাথানকে সতর্কও করেন। অনেকেরই ধারণা এই এনজিওর আড়ালে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে তোলার কাজ করতেন নাথান।

নাথান ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যদিও সেটি বাতিল হয়ে যায়। তবে ওই বছর নাথান ও আরও কয়েকজন যুবক পার্শ্ববর্তী মিয়ানমানের চিন রাজ্যে গিয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে এবং এরপর সে প্রায়ই ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমানের চিন রাজ্যে যাতায়ত করতেন বলে জানা যায়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে নাথান স্থানীয় একজনকে নিজের এনজিওর অফিসে তুলে মারধর করে। আহত অবস্থায় তাকে ফেলে দেওয়া হয়। এর পর পরই নাথান এলাকা ত্যাগ করেন।

স্থানীয় ও নাথানের স্বজনদের ধারণা মিজোরাম ও চিনের কোনো গোষ্ঠী এবং দেশের ভেতরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী চাকমাদের ওপর বিদ্বেষ আছে এমন কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি নাথানকে সহযোগিতা করেছে। এ কারণে নাথান একটি সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছেন। নাথান এখন কোথায় আছেন সেটা কেউই বলতে পারেন না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে নাথান দেশের ভেতরে নাও থাকতে পারে। মিজোরাম বা চিন রাজ্যে থাকার সম্ভাবনা বেশি। কেননা এই দুটি এলাকাই বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে কাছে। আর যেহেতু বান্দরবানে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার মানে নাথান কাছে কোথাও থাকবে সেটিই স্বাভাবিক।  

পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের সীমানার ভেতরে না থাকলে নাথানকে ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হবে।  এদিকে কুকি চিনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের যৌথ অভিযান শুরু করেছে বিভিন্ন বাহিনী। 

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0