Health Benefits of Drinking Tea
অনলাইন ডেস্ক: প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৩:২৯ পিএম
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়ের তালিকায় নিঃসন্দেহে ওপরের দিকে থাকবে চায়ের নাম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, পানির পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পান করা পানীয় হলো চা।
অনেকের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস, তবে এর রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও। ক্লান্তি দূর থেকে শুরু করে আয়ু বৃদ্ধি পর্যন্ত - চা পানের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলেছে নানা ধরনের জরিপ ও গবেষণা।
চা মূলত: তৈরি করা হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের চিরহরিৎ গুল্ম থেকে। এই ছোট গাছের পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে তা থেকে চা উৎপাদন করা হয়।
সচরাচর ব্ল্যাক টি বা র' চা, গ্রিন টি বা সবুজ চায়ের মতো বিভিন্ন ধরনের নাম শোনা গেলেও এসব চা মূলত এই উদ্ভিদ থেকেই ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে, পদ্ধতিতে বা পরিস্থিতিতে চাষ করা হয়ে থাকে।
কফির চেয়ে চা এগিয়ে?
মূলত ক্যাফেইনের কারণেই চায়ের মতো পানীয়ের দিকে বেশিরভাগ মানুষ ঝুঁকে থাকে। সকাল সকাল ঘুম তাড়িয়ে তাজা হতে চা অনেকটা ইঞ্জিনের তেলের মতোই কাজ করে।
আরেকটি প্রচলিত পানীয় কফি বেশ জনপ্রিয় হলেও চায়ের থেকে তা কিছুটা পিছিয়ে। এর একটি কারণ হতে পারে কফিতে থাকা ক্যাফেইনের পরিমাণ।
সমান সাইজের এককাপ কফিতে যেখানে ৮০ থেকে ১১৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে, সেখানে একই পরিমাণ চায়ে থাকে ৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, তুলনা করলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় অর্ধেকেরও কম।
লন্ডনের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একদিনে একই সমান চা-কফি খাওয়ার পর মনোযোগের ক্ষেত্রে অভিন্ন ফলাফল দেখা গেলেও রাতে ঘুমানোর সময় কফি খাওয়া ব্যক্তিদের কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়।
অন্যদিকে, যারা চা খায় তাদের তাদের ঘুম তুলনামূলক দীর্ঘ ও প্রশান্তিদায়ক হয়।
মানসিক চাপ কমায়
চায়ের মধ্যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, এবং সাথে সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি উপাদান এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফলে চা পান করলে স্নায়ু আরাম পায়।
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা যে ‘স্ট্রেস কন্ডিশন’বা মানসিক চাপে পড়ে যাই সেখান থেকে আমাদের শরীরের ভেতরে অক্সাইডস নামের এক ধরনের উপাদান সৃষ্টি হয় বলে জানান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল ইসলাম।
অন্যদিকে, চায়ের মধ্যে থাকে এন্টি-অক্সিডেন্ট। চায়ের মাধ্যমে শরীরে এন্টি-অক্সিডেন্ট প্রবেশ করলে তা অক্সাইডসগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে ব্যক্তি মানসিক চাপ থেকে রেহাই পায় বলে জানান তিনি।
এছাড়া চা মনকে চাঙ্গা করে, শরীর সতেজ করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
চা যে মানুষের স্নায়ুকে শান্ত করে—বেশ কিছু গবেষণাতেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ভেষজ চা পানকারীদের তুলনায় নিয়মিত চা পানকারীরা তুলনামূলক শান্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়।
এছাড়া আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন যারা অন্তত তিন কাপ চা পান করেন তাদের হতাশার ঝুঁকি চা পান না করা ব্যক্তিদের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
চা যে কেবল মানসিক চাপ কমায়, তা-ই নয়। বিভিন্ন গবেষণায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও চা পানের উপকারিতার দিকটি উঠে এসেছে।
২০০৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কয়েক কাপ চা পান করা হলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।
এই উপকারিতা ঠিক কতটুকু, সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা না গেলেও তা পাঁচ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
চায়ে উপস্থিত অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলো বিপাকে সাহায্য করে, যা কি না শরীরের ইনসুলিনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে রক্তের গ্লুকোজকে দক্ষতার সঙ্গে সামলায়।
আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, র’টি বা রং চা গ্রহণের পর শরীরের কোষ থেকে ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন বের হয়।
আর ইনসুলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্গত হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে
চা পানের আরেকটি উপকারিতা হলো হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা।
নেদারল্যান্ডের ১৩ বছরব্যাপী এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি কিছু পরিমাণে হৃৎপিণ্ডকেও সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নিয়ে করা গবেষণাটিতে দেখা গেছে, দিনে ছয় কাপের বেশি চা পান করা ব্যক্তিদের হৃদরোগের শঙ্কা এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যায়।
প্রতিদিন কয়েক কাপ চা পানের ফলে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি সম্ভব।
যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে পাঁচ লাখ চা পানকারীদের নিয়ে করা আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি চা পান করার সঙ্গে মৃত্যুর ঝুঁকি কিছুটা কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণায় বলা হচ্ছে, যারা প্রতিদিন দুই কাপ বা তারচেয়ে বেশি চা পান করেন তাদের চা পান করেন না—এমন লোকদের তুলনায় যে কোনও কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি নয় থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকে।
এছাড়া চা পানের ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর ঝুঁকিও কমে।