আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, জুলাই ৮, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Bangladesh Radio and Television Industry

বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে শিল্পী সম্মানী নামেমাত্র

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ জুন, ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম

বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে শিল্পী সম্মানী নামেমাত্র
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে শিল্পী সম্মানী নামেমাত্র

হুরমতি বড় ধরনের অপরাধ করেছেন। পয়সা গরম করে তাঁর কপালে ছ্যাঁকা দেওয়া হবে। টেলিভিশনের পর্দায় এই দৃশ্যে যেসব দর্শকের চোখ, তাঁরা ভয়ে শক্ত হয়ে বসে আছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত শহীদুল্লা কায়সার রচিত ‘সংশপ্তক’ নাটকের এই দৃশ্যের কথা অনেকেরই স্মৃতিতে আছে। এই নাটক যখন বিটিভিতে প্রচারিত হতো, তখন রাস্তাঘাটে মানুষ কমে যেত। মানুষের চোখ থাকত বিটিভির পর্দায়।

আবার মাঠের কৃষক দুপুরের অবসরে রেডিওর চাবি ঘুরিয়ে বাংলাদেশ বেতারে শুনতেন ‘দুই পয়সার আলতা’ সিনেমার ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’-এর মতো জনপ্রিয় সব গান।

তবে বিটিভি ও বেতার-এই দুই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সেই ‘সুবর্ণ সময়’ এখন আর নেই। বিটিভি ও বেতারের প্রতি দর্শক-শ্রোতার আগ্রহ কমছে। আগ্রহ কমছে শিল্পীদেরও। তাঁরা বলছেন, এই দুই মাধ্যমে নেই মর্যাদাপূর্ণ শিল্পীসম্মানী।

বিটিভি ও বেতারে সবশেষ শিল্পীসম্মানী নির্ধারণ হয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে। মাধ্যম দুটির তালিকাভুক্ত শিল্পীরা বলছেন, এই সময়কালে সবকিছুর দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু শিল্পীদের সম্মানী বাড়েনি। তার ওপর শিল্পীসম্মানী থেকে ১০ শতাংশ উৎসে কর কাটা হচ্ছে।

‘যাতায়াত খরচও হয় না

বিটিভির নাট্যানুষ্ঠান (অভিনয়) বিভাগে শিল্পীর নানা শ্রেণি ভাগ আছে। ‘বিশেষ প্রধান’ চরিত্রের শিল্পীর জন্য নির্ধারিত সম্মানী সবচেয়ে বেশি, প্রতি মিনিট ১৮৯ টাকা। অন্যদিকে সবচেয়ে কম সম্মানী ‘গ’ শ্রেণির গৌণচরিত্রের শিল্পীর, প্রতি মিনিট মাত্র ২৪ টাকা। আর ‘গ’ শ্রেণির পার্শ্বচরিত্রের শিল্পীর সম্মানী প্রতি মিনিট ৪৭ টাকা। একটি নাটকে এই দুই শ্রেণির শিল্পী অভিনয় করতে পারেন ‘নামমাত্র’।

বিটিভির সংগীত বিভাগে (উচ্চাঙ্গসংগীত) একজন ‘খ’ শ্রেণির শিল্পীর সম্মানী প্রতি মিনিট ১৮৯ টাকা। ‘বিশেষ’ শ্রেণির শিল্পীর সম্মানী প্রতি মিনিট ৩৩০ টাকা।

বিটিভির জন্য একটি গান রচনা করে ‘বিশেষ’ শ্রেণির একজন গীতিকার পান ৭৮৮ টাকা। আর ‘খ’ শ্রেণির গীতিকার পান ৫৫১ টাকা। প্রতিটি গান প্রতিবার সম্প্রচারের জন্য ‘বিশেষ’ শ্রেণির একজন গীতিকার রয়্যালটি পান ৩১৫ টাকা। ‘খ’ শ্রেণির গীতিকার পান ১৫৮ টাকা।

বাংলাদেশ বেতারের ‘বিশেষ’ শ্রেণির শিল্পী একটি গানের জন্য ১ হাজার ৩৫০ টাকা, দুটি গানের জন্য ২ হাজার টাকা সম্মানী পান। ‘ক’ শ্রেণির শিল্পী গানপ্রতি পান ১ হাজার ১৫০ টাকা, ‘খ’ শ্রেণির ৯০০ টাকা, ‘গ’ শ্রেণির ৬৫০ টাকা।

বেতারের ‘ক’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত শিল্পী ময়মনসিংহের আবুল কালাম আজাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক’ শ্রেণির একজন শিল্পী তিন মাসে সাধারণত একবার গান গাওয়ার সুযোগ পান। ‘খ’ আর ‘গ’ শ্রেণির ক্ষেত্রে তা হয়তো বছরে একবার। শিল্পীসম্মানী হিসেবে যে টাকা পাওয়া যায়, তাতে যাতায়াতের খরচও হয় না, শিল্পচর্চার ব্যয় নির্বাহ তো দূরের কথা। আর জীবিকা নির্বাহের তো প্রশ্নই আসে না।

ডাক না পাওয়ার অভিযোগ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেতারের কয়েকজন তালিকাভুক্ত শিল্পী অভিযোগ করে বলেন, ঘুরেফিরে পরিচালক-প্রযোজকদের পছন্দের শিল্পীরাই অনুষ্ঠানে ডাক পান। তালিকাভুক্ত হলেও অনেক শিল্পী কখনো পরিবেশনের সুযোগই পান না। তা শিল্পী নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন আছে।

বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এমন ঘটে থাকলে অভিযোগটি নির্দিষ্ট হতে হবে। বেতারের অনেকগুলো কেন্দ্র আছে। কখনোই আমন্ত্রণ পাননি-এমন শিল্পী যদি থাকে, তাহলে তিনি যে কেন্দ্রের, সেখানকার পরিচালককে বিষয়টি অবহিত করতে হবে।

আবার এমন নজিরও আছে, অভিমানে কোনো শিল্পী নিজের তালিকাভুক্তির পরিচয় দিতে চান না। যেমন বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী অজয় মিত্র। তিনি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘বিটিভির তালিকাভুক্ত সংগীত পরিচালক পরিচিতিটি ফেসবুক থেকে মুছে দিলাম, পরিচয়টি দিতেও লজ্জা বোধ হয়।

জনপ্রিয়তা কমার কথা মানে কর্তৃপক্ষ

বিটিভি ও বেতারের জনপ্রিয়তা যে আগের মতো নেই, সে কথার সঙ্গে দ্বিমত করেনি প্রতিষ্ঠান দুটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে তাঁদের দাবি, এর পেছনের কারণ বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির বিস্তার, মানুষের শোনা ও দেখার রুচির পরিবর্তন।

অন্যদিকে বিটিভির মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে অনেক রকম কাজের সুযোগ যেমন আছে, তেমনি সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন জনপ্রিয়তার চেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণ বা তথ্য প্রকাশে বেশি মনোযোগ দিতে হয়। একসময় দেশে শুধু একটি চ্যানেল (বিটিভি) ছিল। এখন মানুষের সামনে অনেক রকম সুযোগ। তবে বিটিভি ভালো কাজ করার চেষ্টা করছে।

শিল্পীসম্মানী বাড়ানোর উদ্যোগ

শিল্পীসম্মানী বাড়ানোর জন্য একটি কমিটি গঠন করে প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া। বেতারের একটি সূত্র জানায়, প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

বিটিভির মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিল্পীসম্মানী ৫০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য ২০২৩ সালে ঢাকা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়। তবে এ বিষয়ে আরও কিছু কাজ বাকি আছে। শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মতামত জানতে হবে। শিল্পীসম্মানী বাড়ানোর প্রস্তাবনা আগামী মাসে (জুলাই) মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পরিকল্পনা আছে।

(তথ্যসূত্র: প্রথমআলো, ২৬ জুন ২০২৪)

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0