আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, শুক্রবার, মে ১০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Parliament election

রাজশাহীর তিনটি আসনে ভোট বিভাজন চরমে

Bijoy Bangla

শাহানুর রহমান রানা

প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০৭:০৯ এএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণ উন্মুক্ত করে দেয়ায় দেশের অন্যান্যস্থানের মতো রাজশাহীর একাধিক আসনেও ভোটের রাজনীতিতে বিভাজন দেখা দিয়েছে। রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে সদর আসনসহ রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) ও রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে ভোট নিয়ে চরম দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর ক্ষোপ কাজ করছে তৃণমূলে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের মাঠে তুলছে ঝড়। যান কারণে, কেউ কেউ নৌকা প্রতীক পেয়েও আছেন চরম হতাশা আর দোদুল্যমানবস্থায়। কোন আসনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী; আবার কোথাওবা দলীয় প্রতীকের হয়ে কাজ করছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। ব্যক্তিগত ইমেজ ফ্রুটফুল থাকায় কেউবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও ভিন্ন প্রতীক নিয়ে ভোটের যুদ্ধে এগিয়ে আছেন বেশখানিকটা। খুববেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ভোট ব্যাংক বৃদ্ধির লক্ষ্যে দৌড়ঝাপ করতে হচ্ছে নৌকা প্রতীক পাওয়া কোন কোন প্রার্থীকে। নির্বাচনী মাঠে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অন্যদল (শরীক) থেকে আসা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদেরকে বলে মন্তব্য তৃণমূল নেতাকর্মী আর স্থানীয় ভোটারদের। কোথাও আবার সরকারদলীয় এমপি ও প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক পেয়েও ভোট বিভাজনের ঘূর্ণিপাকে পতীত হয়েছেন পূর্ববর্তী সময়ে নিজ দায়িত্ব আর কর্তব্যে অবহেলার পাশাপাশি জনবিচ্ছিন্নতার কারণে বলেও মন্তব্য স্থানীয় ভোটারদের। মন্তব্যকারিরা এখানে ভোট বিভাজন বলতে বুঝিয়েছেন, সরকার দলীয় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থক ভোটারদের ভোট নিয়ে বিভাজন (একাধিকভাগে বিভক্ত)। উল্লেখ্য, রাজশাহীর এই তিনটি আসনেই আ’লীগের মনোনীত প্রার্থীর নৌকা পতেীকের বিপরীতে শক্ত স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বি নির্বাচন করছে প্রতীক কাঁচি নিয়ে। 

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তৃণমূলের রাজনীতিতে সমর্থকদের সুপ্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব। সরকার দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় রাজশাহীর ৩টি আসনে চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বেশকয়েকজন নৌকার প্রার্থী। এই তিনটি আসনে শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে বলে মন্তব্য অনেকের। এই বিভাজন শুধু ভোট প্রদানের দিনেই নয়; অনেকস্থানে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই লক্ষ্য করা গেছে। বিভাজনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের উপর হামলা, নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বাচনী অফিস ও গাড়ি ভাংচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছে। কোথাওবা পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলাসহ সাবলীল ও নিরঙ্কুশভাবে প্রচার প্রচারণায় বাঁধাবিঘ্ন সৃষ্টির ঘটনাও ঘটেছে। যার কারণে, একদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে সরকার দলীয় ভোটারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর বিভেদ। তো অন্যদিকে; সাধারণ ভোটাররা আগ্রহ হারাচ্ছে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে বলে মন্তব্য সচেতন ব্যক্তিদের। শুধু ভোট বিভাজনের মধ্যেই থেমে নেই সংকট আর সঙ্কার সীমারেখা। বিএনপি সহ সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা এই বিভেদ আর বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ ভোটারদেরকে উস্কানি দিচ্ছে ভোট কেন্দ্রে না যাবার জন্য বলেও মন্তব্য সচেতন দরীয় ভোটারদের। বিষয়গুলো স্পর্শকাতর হলেও সেটির দিকে কারো যেনো মাথা ব্যথাইনেই বলে মন্তব্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে চলছে ভোট নিয়ে নিজদলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদ, দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর বিভাজনের ঘৌড়দৌড়। এখানে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। আর কাঁচি প্রতীক নিয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুন্ডুমালার সাবেক মেয়র গোলম রাব্বানী। একই আসনে আ’লীগের আকতার হোসেন নামের আরো একজন জেলা আ’লীগের নেতা  আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে। এছাড়াও এই আসনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী শাহনেওয়াজ আয়েশা আক্তার জাহান ডালিয়া। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য তিনি। তাই অন্যান্য আসনের চাইতে এই আসনটিতে আ’লীগের ভোটগুলোর বিভাজন রূপ নিয়ে চতুর্মূখী।

এদিকে, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সেক্রেটারি ফজলে হোসেন বাদশা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঁচি প্রতীক নিয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। নগর আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠণের নেতাকর্মীরা স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা পেয়ে ভোটের মাঠে কাজ করছেন নিজদলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীক নিয়ে। আর অন্যদিকে, কেন্দ্রের নির্দেশনা থাকার পরেও নৌকার প্রার্থী হতাশায় ভুগছেন নৌকার পক্ষে কাউকে না পেয়ে। তবে, তৃণমূলের অনেকেই মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ব্যালট পেপারে সীল কে কাকে মারবে সেটা নির্ভর করবে ব্যক্তি বিশেষের উপর। প্রতীক নাকি দলীয় প্রার্থী সেটি নিয়ে ইতোমধ্যেই স্পষ্টতই একটা বিভাজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মী আর সাধারণ ভোটারদের মাঝে। ভোট বিভাজন, দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর বিভেদ থাকলেও এই কেন্দ্রে এখনো পর্যন্ত অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা বা প্রতিহিংসামূলক কর্মকান্ডের কোন ছোয়া লাগেনি। যে যার মতো করে নির্বাচনী মাঠ গরম রাখছেন।  

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের অবস্থাও একইরকম। একইদলের দুইজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি থাকায় এখানেও ভোট বিভাজনের ছোঁয়া লেগেছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিপক্ষে। এই আসনে শুধু যে ভোট বিভাজনের ছোঁয়াই লেগেছে তা কিন্তু নয়। অন্যান্য আসনগুলোর চাইতে এই আসনে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন একাধিকবার। এছাড়াও, নৌকা প্রতীকের সমর্থক কর্তৃক নিপীড়ন, গাড়ি ভাংচুর আর মারধরের স্বীকার হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বলেও অভিযোগ অনেক। পোস্টার ছিড়ে ফেলা, প্রচারণা কাজে বাঁধাবিপত্তির মতো আচরণ বিধি লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে।

উল্লেখ্য রাজশাহীর ৬টি আসনে সর্বমোট ৪২ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে প্রচার-প্রচারণার কাজে ব্যস্ত সময় কাঁটালেও পাড়ামহল্লার চায়ের আড্ডায় জনশ্রুতি উঠেছে নৌকা নাকি কাঁচি? ব্যালট পেপারে সীল মারবে কোন প্রতীকের উপর? একদিকে দলীয় প্রতীক; তো অন্যদিকে, দলেরই আরেক নেতা। দ্বিধাদ্বন্দ্বের বেড়াজালে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে ভোট বিভাজনের মতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়টি বলে মন্তব্য তৃণমূলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ও সচেতন ব্যক্তিদের। আরেকপক্ষের দাবি, বর্তমান সরকার সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যে কোন বিজয়ী প্রার্থীকে নিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে। তাই দলীয় ব্যক্তি কিংবা প্রতীকের জয় পরাজয়ের বিষয়টি মূখ্য নয়; এটি গৌণ একটি বিষয়। বলাচলে, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিরোধীরা বিষয়টিকে মূখরোচক রাজনৈতিক গল্পগুজোবে পরিণত করেছে। এদেরসাথে সরকার দলীয় কিছু স্বার্থন্বেষী নেতাকর্মীরাও যোগ হয়েছেন। কারণ, নির্বাচনে যে কোন যোগ্য ব্যক্তি প্রার্থী হবার অধিকার রাখে। এখানে কে কোন পদে আছে, কে স্বতন্ত্র আর কে দলীয় প্রতীক সেটি মুখ্য বিষয় নয়। তাই, হতাশা বা দ্বিধাদ্বন্দ্বে না থেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোটটি যোগ্য প্রার্থীকে দিয়ে আসার পরামর্শ দেন মন্তব্যকারিরা।


google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0