আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, সোমবার, মে ২০, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Body fire

প্রেমিক এড়িয়ে চলায় কারনে শরীরে আগুন দেন কলেজছাত্রী

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১১:১৮ এএম

প্রেমিক এড়িয়ে চলায় অভিমান করে নিজের শরীরে আগুন দিয়েছিলেন কলেজছাত্রী মাশকুরা আক্তার মুমু (১৯)। দগ্ধ মুমু বর্তমানে ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে তার বাবা আবদুল মালেক মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন। এর আগে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। মাশকুরা আক্তার মুমু ফেনী ন্যাশনাল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি পরিবারের সঙ্গে শহরের পাঠান বাড়ি সড়কে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার সদর উপজেলার রামনগর এলাকায়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবদুল মালেক বলেন, গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মুমুর বিয়ের জন্য একটি প্রস্তাব আসে। এতে সে অসম্মতি জানিয়ে নাহিদ নামে এক সহপাঠীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানান। তখন থেকে আমি আর তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়নি। পরে গত বছরের নভেম্বর মাসে নাহিদের ভাই লক্ষ্মীয়ারা বাজারে আমার সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলে। তার ভাই বলে নাহিদকে প্রবাসে পাঠিয়ে দেবে এবং প্রবাস থেকে ফেরা পর্যন্ত আমার মেয়ে যেন তার জন্য অপেক্ষা করে। এরপর এ বিষয়ে বিগত একবছরে আর কোন কথা বলিনি।

তিনি আরও বলেন, পরে নাহিদ তাকে প্রত্যাখ্যান করে। যেখান থেকে অভিমানে মুমু এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছি। মুমুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। এ মুহূর্তে তার সুস্থতা ছাড়া আর কিছু ভাবছি না।

 স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাহিদ নামে এক ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুমুর। তাদের মধ্যে কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল। সোমবার সকালে ওই এলাকায় যান মুমু। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্মীয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় সে। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ মুমু সাংবাদিকদের কাছে নিজের শরীরে নিজে আগুন দিয়েছেন বলে জানান। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষ্মীয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মহিমা রাণী পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই সময় বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে মিটিং চলাছিল। একটি কল আসায় আমি বাইরে বের হই। ফোনে কথা বলা অবস্থায় স্কুল গেটের ভেতর ওই মেয়েকে (মুমু) ঘুরাঘুরি করতে দেখি। একপর্যায়ে গেটের ভেতরে বসা অবস্থায় তার শরীরের সামনের অংশে হঠাৎ আগুন জ্বলতে দেখি। জলন্ত অবস্থায় সে চিৎকার করে দৌড়ে ৬০-৭০ গজ সামনে স্কুলের টিউবওয়েলের কাছে এসে বসে পড়ে। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাজারের লোকজন ছুটে এসে তার গায়ে পানি ঢালে। এ সময় আমার গায়ের চাদর দিয়ে দগ্ধ শরীর ঢেকে দিয়েছি। তখন ঘটনাস্থলে দিয়াশলাই দেখতে পেয়েছি।

লক্ষ্মীয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে একটি সভা চলছিল। এমন সময় চিৎকার শুনে বের হয়ে দগ্ধ অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়েছি। আমরা সেখান থেকে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই।

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে ওই মেয়েটিকে (মুমু) স্কুল ফটকের ভেতর ঘুরাঘুরি ও শহীদ মিনারে বসে থাকতে দেখেছি। এক সময় আমি দশম শ্রেণির ক্লাস করানোর সময় কেরোসিনের গন্ধ পেয়ে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করি। তখন বাইরের এসব চলছে বুঝিনি। দুপুর ১২টার দিকে অফিসকক্ষে মিটিং চলাকালে বাইরে থেকে চিৎকার শুনে বের হয়ে দগ্ধ অবস্থায় তাকে দেখতে পাই। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল ফটকের সামনের এক ব্যবসায়ী বলেন, নাহিদের সঙ্গে ওই মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক থাকায় সে দেখা করার জন্যই লক্ষ্মীয়ারায় এসেছিল। এ ঘটনার সময় নাহিদও দোকানে ছিল বলে আশপাশের লোকজন থেকে জেনেছি। স্কুলের গেইট ও নাহিদের দোকানের অবস্থান মুখোমুখি হওয়ায় ওই মেয়ে গেটের ভেতর থেকে নাহিদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করছিল। মুমু গায়ে আগুন দেওয়ার একপর্যায়ে সে দোকান থেকে বের হয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। 

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে মুমুর প্রেমিক নাহিদ। নাহিদের প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতেন না দাবি করে তার ভাই নাসির উদ্দিন সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোমবার এ ঘটনার পরই আমাদের পরিবার এ সম্পর্কের কথা জেনেছি। তাদের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে দুই পরিবারের পারিবারিক কথাবার্তার যে কথা ছড়িয়ে পড়েছে তা সত্য না। দগ্ধ মুমুর বক্তব্য পাওয়া গেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। এ সময় নাহিদ ও তার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন সোহেল। 

নাহিদের বড় বোন সালমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুমু যদি আগে বিষয়টি আমাদের জানাতো তাহলে পারিবারিকভাবে বসে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। এমন ঘটনা কোনভাবেই কাম্য না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দগ্ধ ছবি দেখে কান্না করেছি। তার সুস্থতার জন্য নফল নামাজ পড়ে দোয়া কামনা করেছি। 

তিনি বলেন, আমার ভাই (নাহিদ) ও মুমু দুজনই লক্ষ্মীয়ারা মাদরাসায় পড়াকালীন সহপাঠী ছিল। যদি তাদের প্রেমের সম্পর্ক থেকেও থাকে তবে এখনো তো বিয়ের বয়স হয়নি। অথচ মানুষ ঘটনাকে ভিন্ন দিকে নিতে বিভিন্ন ধরনের কথা রটাচ্ছে। 

মাশকুরা আক্তার মুমুর ব্যাপারে ফেনী ন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। কলেজে এখন পর্যন্ত কখনও কোন অস্বাভাবিক কিছু আমাদের চোখ পড়েনি। তার এমন ঘটনা দুঃখজনক। 

ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অংপ্রু মারমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। 


কটু/বি

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0