আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, মঙ্গলবার, মে ২১, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Waymen are working on the railway line amid the heat allotment

হিট এ্যালাট জারির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইনে কাজ করছে ওয়েম্যানরা

Bijoy Bangla

আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী)

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ০৫:০৮ পিএম

হিট এ্যালাট জারির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইনে কাজ করছে ওয়েম্যানরা
হিট এ্যালাট জারির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেল লাইনে কাজ করছে ওয়েম্যানরা

দেশে বিরাজমান অসহনীয় তাপমাত্রা যখন ৪০° ডিঃসেঃ উপরে,লু হাওয়ায় প্রান কূল ওষ্ঠাগত,হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে মানুষসহ প্রানীকূল,একটু স্বস্থির জন্য সবাই আশ্রয় নিচ্ছে ছায়ায়,যার কারনে সরকার সারাদেশে হিট এ্যালার্ট জারি করে বন্ধ ঘোষনা করেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তখন রেলের ইণ্জিনিয়ার বিভাগের ওয়েম্যানরা এসবের মধ্যে কাজ করছেন খোলা আকাশের নীচে উত্ততপ্ত রেল লাইনের উপর।

ট্রেন চলাচলের জন্য প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন ওয়েম্যানরা।রেল লাইন সচল না থাকলে কোন ভাবেই ট্রেনের চাকা ঘুরবে না।তাই এদের শীত,বর্ষা,এমন কী গ্রীষ্মের উত্তপ্ত তাপ উপেক্ষা করে নিয়মিত কাজ করে থাকে তারা।

বৃটিশ আমলে প্রথম রেল লাইন নির্মানের সময়,বৃটিশরা গ্রামের পর গ্রামের সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও পুরুষদের বন্দি করে শেকল পরিয়ে রেললাইন স্থাপনের কাজটি করেন।

বৃটিশরা জানতো পৃথিবীর সবচেয়ে এই কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ন কাজটি করাতে হলে এভাবেই করাতে হবে।

বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও বাংলাদেশে বৃটিশদের মতো  বন্দি বা শিকল না পরালেও সম কস্ট দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। তাদের দেয়া হচ্ছেনা নুন্যতম সুযোগ সুবিধা।

প্রখর রৌদ্র তাপ,উত্তপ্ত পাথর ও রেললাইন থেকে বিষ্ফরিত উত্তপ্ত তাপ একা ভূত হয়ে অগ্রণী বায়ুর রুপ ধারন করে।প্রবাহিত তাপমাত্রা থেকে রেল লাইনে ১৫° থেকে ২০° সেঃসিঃ তাপ মাত্রা বেশি থাকে।

এই উত্তপ্ত বাতাস ও প্রখর রৌদ্রতাপে

কাজ করে ওয়েম্যানরা।

২৪ এপ্রিল বেলা ১১ টায়,রাজশাহী রেলস্টেশনে ওয়েম্যানের একটি গ্যাং ( দল)কাজ করছিলো। সে সময় গুগুল বলছে তাপমাত্রা ৪০° সেঃসিঃ।উষ্ণ বায়ুর তীব্র তাপের মাঝে তারা গাঁথি,কোদাল দিয়ে রেল লাইনে বিরামহীন কাজে ব্যাস্ত।

কেউ গাঁথি দিয়ে লাইনের নীচে পাথর ঢুকাচ্ছে,কেউ কোদাল ও হাত দিয়ে পাথর সমান করছে,কেউ লাইনে ময়লা- ঘাস পরিস্কারে ব্যাস্ত রয়েছে।

মাথায় নেই ক্যাপ,স্যান্ডেল বিহীন খোলা "পায়ে" উওপ্ত পাথরের উপরে দঁড়িয়ে কাজ করছে।ওদের কাজের ব্যস্ততা দেখে যেন প্রখর রৌদ্রেরঝাঁজ ও উত্তপ্ত বাতাস লজ্জা পেয়ে মুক ঢেকেছ।

কথাহয় সেখানে কর্মরত ওয়েম্যানদের সাথে।তারা জানায়,শীত,গ্রীষ্ম,বর্ষা বলে আমাদের কিছু নাই।সমান তালে ২৪ ঘন্টা কাজ করে তারা।তারা শুনেছেন তাদের জন্য  গ্যাং হাট বরাদ্দ আছে।আসলে সেটা কি চোখে দেখেনি।শুনেছি,গ্যাংহাট নাকি কর্ম শেষে তাদের বিশ্রামের যায়গা।রোদ,বৃস্ট,ঝড়ে আশ্রয়ে জন্য উন্নত মানের তাঁবুর ঘর।সেখানে খাবার রান্নার সুবিধা,টয়লেটে ও পানির ব্যবস্থা থাকবে।আমরা গাং হাটের রুপকথার গল্প শুনেছি হয়তো।

কাজের ফাঁকে একটু জিরিয়ে নুন্যতম ব্যবস্তাও নেই তাদের।প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় খোলা আকাশের নীচে।

বড় সমস্যা মহিলা কর্মীদের,নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহিলা ওয়েম্যানরা বলেন, পুরুষদের সমানতালে তালে তাদের কাজ করতে হয়।তাতে সমস্যা নাই,কাজ তো কাজই। তাদের নিরাপত্তার অভাব,প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় পুরুষদের মতই। তাদের কতৃপক্ষের নিকট চাওয়া,কর্ম ফাঁকে একটু জিরিয়ে নেয়ার জন্য ছোট তাঁবু বা বড় ছাতা,প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার জন্য বহন যাগ্য মোটা কাপড়ের ব্যবস্থ,ঝড় বৃষ্টিতে আত্মরক্ষার জন্য দূরত্ব ভেদে তা়ঁবু স্থাপন,ক্যাপ, পায়ের জুতা ও পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন সরবরাহের দাবি তাদের।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রেলওয়ে রাজশাহী প্রকৌশলী বিভাগের, সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আবু জাফরের সাথে।তিনি বলেন,জিএম মহাদয় ও প্রধান প্রকৌশলী মহাদয় ওয়ম্যানসহ মাঠ কর্মীদের বিষয়ে তার সার্বক্ষণিক  সহানুভূতিশীল। 

গ্রীষ্মের শুরুতেই নির্দেশনা পত্র জারি করেছেন কতৃপক্ষ।তাতে জানানো হয়েছ,মাঠ কর্মীদের পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন,ক্যাপ ও স্যান্ডেল পরে কাজ করা,কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য মটর ট্রলি প্রস্তুত রাখা,সুপারভাইজার কর্মকর্তাদের মোবাইল কোনো সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখার জন্য নির্দেশনা দেন।

আমিসহ উর্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী ( পথ) ভবেশ চন্দ্র রাজবংশী ও উর্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) মোঃ বাবুল আক্তার নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কার্যকর বলা বাস্তবায়ন করছি।

এবিষয়ে,পশ্চিম রেলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আসাদুল হক বলে, রেল চলাচলের জন্য ইণ্জিয়ারিং বিভাগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

ট্রেন চলাচলের জন্য শুরুটাই তাদের দিয়েই শুরু।এ বিভাগের সকলেই মাঠ কর্মী।

গ্রীষ্মের শুরুতেই ওয়েম্যানদের কাজের জন্য তাদের ইউনিফর্মসহ সকল সরন্জামসহ সজল সুবিধা সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।যার মধ্যে রয়েছে,খাবার স্যালাইন,ক্যাপ,জুতা সরবরাহ,হটাৎ হিটস্ট্রোক করলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য মটর ট্রলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।এছাড়া কাজের পরিমান কমানো ও  কাজের ফাঁকে ফাঁকে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়ার জন্য বলা হয়েছ।

আমি নিজেও তাদের খোজ খবর রাখছি বলেও জানান রেলের এই উর্ধতন কর্মকর্তা।


google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0