আর্কাইভ কনভাটার ঢাকা, বুধবার, জুলাই ৩, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Logo

Flooding in Sylhet city

নামছে ভারতের পানি, সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা

Bijoy Bangla

অনলাইন ডেস্ক:

প্রকাশিত: ৩১ মে, ২০২৪, ০৮:২৬ পিএম

নামছে ভারতের পানি, সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা

 সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতি হয়েছে। বাড়িঘর রাস্তাঘাট থেকে নামতে শুরু করেছে পানি।

তবে উজানে ভারতের অভ্যন্তরে ভারিবর্ষণ ফের ঢলের কবলে পারেন উপজেলাগুলোর বাসিন্দারা। উজানে বন্যা পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতি হলেও সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় এবার সিলেট নগর প্লাবিত হচ্ছে। সঙ্গে পানি বাড়ছে সুনামগঞ্জেও।

শুক্রবার (৩১ মে) সকাল থেকে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

সুরমার পানি বেড়ে নগরের ছড়াখালগুলো দিয়ে উল্টো পানি ঢুকে তালতলা, মেন্দিবাগ, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বাসা-বাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। পানি ওঠেছে সুবহানিঘাট মাদরাসায়ও। মাদরাসার সামনের মাঠ যেন পুকুরে পরিণত হয়েছে।

নগরের তালতলায় সিলেটের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনেও পানি প্রবেশ করেছে বৃহস্পতিবার রাতে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেন। বাসিন্দারা জানান, নগরের পানি নিষ্কাশনের খালগুলো দিয়ে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করে নগরের নিম্নাঞ্চলগুলোয় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিমূলক সভা করে সিলেট সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার জরুরি সভা করে সিসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান এ সিদ্ধান্ত নেন। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সভায় সব ধরনের জরুরি সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নগরবাসীর জরুরি সেবার জন্য ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম (০১৯৫৮২৮৪৮০০) চালুসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে রান্না করা খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার অন্তত ৪৮টি ইউনিয়নের ৩৫টি-ই প্লাবিত হয়ে অন্তত সাড়ে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হন।

তবে শুক্রবার থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত থেকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার গোয়াইন, পিয়াইন ও সারী নদীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলা সদর, তোয়াকুল, নন্দীরগাঁও, পূর্ব আলীরগাঁও, পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, রুস্তমপুর ও বিছানাকান্দি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম থেকে পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু হয়েছে। উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রসমূহ থেকে মানুষজন গবাদিপশু ধীরে ধীরে বাড়ি ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।

জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর, চারিকাটা, দরবস্ত ও ফতেপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি দিকে।

কানাইঘাট উপজেলার পৌরসভা, লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম, দিঘীরপাড়, পূর্ব সাতবাক ও বড়চতুল ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। রাত থেকে পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করায় মানুষের মধ্যে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।

জকিগঞ্জ উপজেলার সদর, বারহাল, খলাছড়া, কাজল শাহ, বিরশ্রী ও মানিকপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নের বেশি প্লাবিত হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জে ধলাই নদীর পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে‌। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ইছাকলস, উত্তর রণিখাই, দক্ষিণ রণিখাই ও তেলিখালের প্রায় ৯৩ হাজারের অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। তবে আজ পানি কমতে শুরু করায় মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরমুখী হচ্ছেন।

এদিকে, আকস্মিক বন্যায় সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্টের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

গোয়াইনঘাটের জাফলং, পূর্ব জাফলং, লেংগুড়া, সদর ইউনিয়ন, পূর্ব আলীরগাঁও, ডৌবাড়ি, পশ্চিম আলীরগাঁওসহ ১৩টি ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের রাস্তাঘাট পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম।

এছাড়া সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ, কান্দিগাঁও ও খাদিমনগর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলায় চারখাই, দুবাগ, শেওলা ও মুড়িয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকা।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারি বৃষ্টিপাতে ওসমানীনগর উপজেলার সাদীপুর ও পশ্চিম পৈলনপুর এবং বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী, রামপাশা ও দেউকলস ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ভারি বর্ষণে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

প্রশাসন সূত্র জানায়, দুর্যোগ মোকাবিলায় গোয়াইনঘাটে ৫৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৮টি, বালাগঞ্জে ১৫টি, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫টি, কানাইঘাটে ৩১টি, জকিগঞ্জে ৫৫টি, সিলেট সদরে ২৯টি, গোলাপগঞ্জে ৫৭টি, বিশ্বনাথে ৫৮টি, বিয়ানীবাজারে ৬৬টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮৬টি ও ওসমানীনগরে ২৩টি অস্থায়ী ও স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে আগামী কয়েক দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি-গোয়াইনসহ অন্যান্য নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার ৬টা পর্যন্ত সিলেটে প্রায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ০ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৯৩ মিলিমিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্যমতে, কানাইঘাট পয়েন্ট, কুশিয়ারা দুটি পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাটে সুরমার পানি বিপৎসীমার ২ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটে সুরমার পানি ১০ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এখানে পানির বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। জকিগঞ্জের অমশীদে কুশিয়ারার পানি ১৭ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এখানে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। শেওলায় কুশিয়ারার পানি ১৩ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহমান, এখানে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। এছাড়া শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা পানি ৭ দশমিক ৯৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহমান, এখানে বিপৎসীমা ৭ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।

এছাড়া সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ৬ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর আজ সকাল ৯টায় ছাতকে সুরমার পানি ৯ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এখানে বিপৎসীমা ৭ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার।

google.com, pub-6631631227104834, DIRECT, f08c47fec0942fa0